হযরত আদম (আ)-এর সৃষ্টি এবং ইবলীসের উপর আল্লাহ পাকের চিরস্থায়ী লা’নতের কাহিনী


হযরত আদম (আ)-এর সৃষ্টি কাহিনী


আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের হুকুমে ফেরেশতা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী জিনদের থেকে জগতকে মুক্ত করার পর আল্লাহর পাকের দরবার থেকে ঘোষণা এল-হে ফেরেশতারা! আমি যমীনে আমার খলীফা (প্রতিনিধি) সৃষ্টি করব। পবিত্র কালামে ইরশাদ হচ্ছে-

২:৩০ وَ اِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلٰٓئِكَۃِ اِنِّیۡ جَاعِلٌ فِی الۡاَرۡضِ خَلِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡۤا اَتَجۡعَلُ فِیۡهَا مَنۡ یُّفۡسِدُ فِیۡهَا وَ یَسۡفِكُ الدِّمَآءَ ۚ وَ نَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَ نُقَدِّسُ لَكَ ؕ قَالَ اِنِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُوۡنَ

উচ্চারণঃ ওয়া ইয’ কা-লা রাব্বুকা লিলমাল-ইকাতি ইন্নী জা-‘ইলুং ফিল আর্দি’ খালীফাতাং কা-লূ- আতাজ‘আলু ফীহা- মাইঁ ইউফ্ছিদু ফীহা- ওয়া ইয়াছফিকুদ্দিমা-আ ওয়ানাহ’নু নুছাব্বিহু বিহাম্দিকা ওয়া নুকাদ্দিছু লাকা কা-লা ইন্নী- আ‘লামু মা-লা-তা‘লামূন।
অর্থঃ আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি যমীনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।

আদম সৃষ্টির জন্য মাটি সংগ্রহ


এরপর জিবরাঈল (আঃ)-এর প্রতি আদেশ হল-যমীনের উপরিভাগ থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে আস। এ নির্দেশ পেয়ে জিবরাঈল (আঃ) তৎক্ষণাৎ যমীনে এসে বর্তমানে যে স্থানে কাবা ঘর বিদ্যমান সেখান থেকে এক মুষ্টি মাটি নিতে চাইলেন। যমীনে জিবরাঈল (আঃ)-কে আল্লাহর কসম দিয়ে বলল- হে জিবরাঈল! আমার নিকট থেকে মাটি নিও না। এ মাটি থেকে আল্লাহ্ তাঁর খলীফা, প্রতিনিধি সৃষ্টি করবেন। আল্লাহর এই প্রতিনিধির সন্তান সন্তুতি খুব পাপী এবং শাস্তিযোগ্য হবে। আমি অসহায় মাটি- এই  শাস্তিভোগ করার শক্তি আমার নেই। একথা শুনে হযরত জিবরাঈল (আ) মাটি না নিয়ে ফিরে যান। এভাবে মীকাঈল এবং ইসরাফীল (আ) ও মাটি না নিয়ে ফিরে যান । তাই আল্লাহ্ পাক আযরাঈল (আ) -কে মাটি আনার নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেন । এবারও যমীন পূর্বের ন্যায় আল্লাহ্র কসম দিয়ে মাটি নিতে নিষেধ করে। তিনি নিষেধ অমান্য করে বললেন, তুমি যাঁর কসম দিচ্ছ আমি তাঁর আদেশে এসেছি। আমি তাঁর আদেশ অমান্য করব না, তোমাকে নিয়েই যাব। অতএব আযরাঈল (আ) হাতে করে যমীন থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে ঊর্ধ্ব জগতে চলে গিয়ে আল্লাহ্র দরবারে নিবেদন করেন- হে আল্লাহ্! আপনি জ্ঞাতা ও দ্রষ্টা, আমি এটা হাযির করেছি। তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, হে আযরাঈল! এ মাটি হতেই আমি যমীনে আমার এক খলীফা সৃষ্টি করব এবং তার জীবন হরণ কালেও তোমাকেই নিয়োগ করব। হযরত আযরাঈল (আ) এ কথায় অপারগতা প্রকাশ করে বললেন-হে আল্লাহ্! এ দায়িত্ব যদি আমাকে দেন তবে আপনার বান্দারা আমাকে দুশমন ভাববে এবং গালি দেবে। আল্লাহ্ পাক বললেন- আযরাঈল! আমি সমগ্র সৃষ্টির স্রষ্টা, আমি প্রত্যেক মৃত্যুর একেকটি কারণ সৃষ্টি করব। ফলে প্রত্যেকে সে কারণের অধীনেই মৃত্যুমুখে পতিত হবে, কাজেই তখন আর তোমাকে দুশমন ভাববে না। আমি কাউকে রোগে, কাউকে আগুনে পুড়ে এবং কাউকে পানিতে নিমজ্জিত করব। অতঃপর আল্লাহ্র নির্দেশে ফেরেশতারা মাটি তায়েফ ও মক্কা শরীফেরে মাঝখানে রেখে দেন। তখন আল্লাহ্র রহমতের বৃষ্টি তার ওপর বর্ষিত হয়, এতে দু বছরে সে মাটি কাদায় পরিণত হয়। চতুর্থ বছরে মাটি খননে এবং ষষ্ঠ বছরে শুকনা মাটিতে রূপান্তরিত হয়। অষ্টম বছরে হযরত আদম (আঃ)-এর আকৃতি সৃষ্টি হয় । তখন একদিন ইবলীস সত্তর হাজার ফেরেশতা সাথে নিয়ে আদম (আ)-এর নিকট এসে দেখে, তাঁর দেহ পিঞ্জর মাটিতে পড়ে রয়েছে। এসময় ইবলীস তাঁর প্রতি অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। অন্য এক দিন ফেরেশতারা আযাযীলকে বললেন, এ মাটি হতে আল্লাহ্র প্রতিনিধি সৃষ্টি হবে। সে বলল, একথা সত্য। আল্লাহ্ তা'আলা এ আকৃতিকে আমার অধীন করে দিলে আমি তাকে ধ্বংস করে ফেলব। আর আমাকে তার অধীনস্থ করে দিলে আমি তার অধিনতা স্বীকার করব না ।

আদম (আ)-এর দেহে ইবলীসের প্রবেশের চেষ্টা


আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন অভিশপ্ত ইবলীস হযরত আদম (আ)-এর দেহ পিঞ্জরাভান্তরে প্রবেশ করে নাভি পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। কিন্তু আদম (আ)-এর দেহ পিঞ্জরে ভীষণ উত্তাপের কারণে সে বের হয়ে আসে। এতে আদমের প্রতি আযাযীলের হিংসা বিদ্বেষ ও শত্রুতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে যায় এবং আদম (আ)-এর দেহ পিঞ্জরের উপর থুথু ফেলে চলে আসে। জিবরাঈল (আ) আল্লাহর নির্দেশে আদমের দেহ পিঞ্জর থেকে ইবলীসের থুথু নিয়ে তা থেকে কুকুর সৃষ্টি করেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স)-এর পবিত্র রূহ আরশে অবস্থান করে তীহ পাঠ করছিল, তখন রাসূলুল্লাহ (স)-এর ঘামের ফোঁটা সেখান থেকে টপকে ঐ স্থানে পড়ে যেখানে এখন তাঁর শেষ বিশ্রামস্থল হয়েছে। আল্লাহর আদেশে জিবরাঈল (আ) সেখানকার মাটিতে মেষ্ক-আম্বর মিশিয়ে সুগন্ধযুক্ত করে তা আদম (আ)-এর মুখমণ্ডলে মেখে দেন। এর ফলে আদম (আ)-এর চেহারার নূর দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।

আদম (আ)-এর দেহে রূহের প্রবেশ


এ ঘটনার চল্লিশ দিন পর হযরত আদম (আ)-এর রূহ সৃষ্টি হলে তখন জিবরাঈল, মীকাঈল, ইসরাফীল ও আযরাঈল (আ)-এর প্রতি আদমের রূহ দেহ পিঞ্জরে পৌঁছে দেয়ার আদেশ করা হয়। তাঁদের প্রত্যেকের সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা। আদমের রূহ একটি নূরের পাত্রে করে আরেকটি নূরের ঢাকনা দিয়ে ঢেকে এনে আদম (আ)-এর মস্তকের ওপর রেখে ঢাকনা উঠিয়ে ফেলে। কেমন করে আদমের রূহ দেহ পিঞ্জরে প্রবেশ করে তা দেখার জন্য সপ্ত আকাশে ফেরেশতার আগমন হয় । যখন শব্দ হল- হে রূহ! এ দেহ পিঞ্জরে প্রবেশ কর। তখন আদম (আ)-এর রূহ দেহ পিঞ্জরের চারদিকে সাতবার চক্কর দেয়। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে নিবেদন করে হে আল্লাহ্! আমি নূরের তৈরি, আর এ দেহ পিঞ্জর অন্ধকার আবর্জনাপূর্ণ, কেমন করে আমি এতে প্রবেশ করব। আবার শব্দ হল- হে আদমের রূহ! অনিচ্ছায় এ দেহে পিঞ্জরে প্রবেশ কর এবং অনিচ্ছায় বের হয়ে এসো। এ নির্দেশ পেয়ে আদমের রূহ রন্ধ্র পথে দেহ পিঞ্জরে প্রবেশ করে মস্তিষ্কের চতুর্দিকে ঘুরতে থাকে । যখন আদম (আ) চোখ খোলেন তখন তাঁর রূহ মাথা থেকে কণ্ঠনালীতে, কণ্ঠনালী থেকে বক্ষে এবং বক্ষ থেকে নাভি পর্যন্ত পৌঁছে, কর্দমাক্ত দেহ পিঞ্জর গোশত, হাড়, অস্থিমজ্জা ও অন্ত্রে রূপান্তারিত হওয়ার ফলে আল্লাহ্ কুদরতে আদম (আ) যমীনের ওপর হাতে ঠেস দিয়ে উঠতে চান। তখন ফেরেশতারা বলে উঠেন- এ বান্দাহ্ ত্বরাপ্রবণ হবে। এখনও তার শরীর অর্ধেক কর্দমাক্ত অথচ সে ওঠতে চাচ্ছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক বলেন-

(খুলিকাল ইনসানু ‘আজুলা) অর্থঃ মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ত্বরা প্রবর্ণ করে ।

আদম (আ) স্বীয় দেহের প্রতি তাকিয়ে দেখলেন, আল্লাহ্ পাক তাঁকে কি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এ সময় তাঁর রূহ, জোড়া, রগসমূহ, গোশত, হাড় ও অস্থিমজ্জা, মোট কথা সমস্ত শরীরে বায়ুর ন্যায় ঘুরতে থাকে। তখন আদম (আ)-এর মস্তককে শুইয়ে দেয়ার এবং চেহারা মর্দনের জন্য ফেরেশতাদের পাঠান হয়। এর অল্পক্ষণ পরেই তাঁর হাঁচি আসে। আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে আগত এলহামের শিক্ষানুসারে হযরত আদম (আ) আলহামুদ লিল্লাহ্ বলে ওঠেন। উত্তরে আল্লাহ্ পাকের তরফ থেকে বলা হয় ইয়ারহামুকাল্লাহ্। তাই কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ্ বললে উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ্ বলা মুসলমানদের ওপর ওয়াযিব করা হয়েছে।

আদম (আ)-কে সিজদা করার কাহিনী


এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে জিবরাঈল (আ)-এর প্রতি হুকুম হল- তিনিও যেন হাঁচি দেন। আল্লাহ্ পাক এও বললেন, আমি আদম থেকে এক বান্দা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম কে সৃষ্টি করব। হযরত আদম (আ) মাটি থেকে উঠে সুসজ্জিত পোশাক ও স্বর্ণখচিত মুকুট পরিধান করে বেহেশতে অবস্থিত এক আসনে গিয়ে উপবেশন করেন, যা গহনাপত্র হীরা, জহরত দ্বারা সুসজ্জিত। এ সময় তাঁর চেহারার নূর আল্লাহর আরশ পর্যন্ত চমকাতে থাকে। আর এই ছিল নূরে মুহাম্মদী (স) । অতঃপর সকল ফেরেশতাদের প্রতি হযরত আদম (আ)-কে সিজদা করার জন্য আল্লাহ্ তাআলার আদেশ হল । আর এ সিজদা ছিল আদমের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ইবাদতের সিজদা নয়। পবিত্র কালামে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন-

২:৩৪ وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِكَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی وَ اسۡتَكۡبَرَ ٭۫ وَ كَانَ مِنَ الۡكٰفِرِیۡنَ

উচ্চারণঃ ওয়া ইয’ কু’ল্না- লিলমালা-ইকাতিছ্জুদূ লিআ-দামা ফাছাজাদূ- ইল্লা-ইব্লীছা আবা-ওয়াছতাক্বারা ওয়া কা-না মিনাল কা-ফিরীন

অর্থঃ আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।

ফেরেশতারা সিজদা থেকে মস্তক উত্তলন করে বুঝতে পারলেন, সিজদা করতে অস্বীকারকারী ইবলীস। তখন ফেরেশতারা পুনরায় সিজদায় পতিত হয়। ফেরেশতারা দ্বিতীয় সিজদা ছিল আল্লাহর নির্দেশ পালনের শুকরিয়া স্বরূপ। এবার আল্লাহ্ পাক ইবলীসকে লক্ষ্য করে বললেন-

৩৮:৭৫ قَالَ یٰۤاِبۡلِیۡسُ مَا مَنَعَكَ اَنۡ تَسۡجُدَ لِمَا خَلَقۡتُ بِیَدَیَّ ؕ اَسۡتَكۡبَرۡتَ اَمۡ كُنۡتَ مِنَ الۡعَالِیۡنَ

উচ্চারণঃ কা-লা ইয়া-ইব্‌লীছু মা- মানা‘আকা আং তাছ্‌জুদা লিমা- খালাক’তু বিয়াদাইইয়া আছ্‌তাক্‌বার্‌তা আম্‌ কুংতা মিনাল ‘আ-লীন।

অর্থঃ আল্লাহ বললেন, ‘হে ইবলীস, আমার দু’হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহঙ্কার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন? সে বলল-

৩৮:৭৬ قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡهُ ؕ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّ خَلَقۡتَهٗ مِنۡ طِیۡنٍ

উচ্চারণঃ কা-লা আনা খাইরুম্‌ মিনহু খালাক’তানী মিন্‌ না-রিওঁ ওয়া খালাক’তাহূ মিং তীন।

অর্থঃ সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নি থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’

 এবার আল্লাহ্ পাক তাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করলেন-

৩৮:৭৮ وَّ اِنَّ عَلَیۡكَ لَعۡنَتِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ الدِّیۡنِ  ৩৮:৭৭ قَالَ فَاخۡرُجۡ مِنۡهَا فَاِنَّكَ رَجِیۡمٌ  

উচ্চারণঃ (৭৭) কা-লা ফাখ্‌রুজ মিন্‌হা- ফাইন্নাকা রাজীম। (৭৮) ওয়া ইন্না ‘আলাইকা লা‘নাতী-ইলা- ইয়াওমিদ্দীন।

অর্থঃ (৭৭) তিনি বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কেননা নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত। (৭৮) আর নিশ্চয় বিচার দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার লা‘নত বলবৎ থাকবে।

ইবলীসের উপর এ বহিষ্কারাদেশের প্রয়োগ ক্ষেত্র সম্পর্কে ওলামায়ে কিরাম ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কারো মতে বের হয়ে যা' এর অর্থ ঈমান থেকে বেরিয়ে যা। কেউ বলেন, ফেরেশতাদের দল থেকে বের হয়ে ইবলীস হয়ে যা। এসময় আল্লাহ্র গযবে তার আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে চক্ষুদ্বয় চলে আসে বক্ষে। অতঃপর কেউ যখন তাকে দেখত, তখন বলত-এ আল্লাহ্র দরবার থেকে বিতাড়িত, অভিশপ্ত, লাঞ্ছিত ও অপমাণিত। অতঃপর শয়তান ইবলীস আল্লাহ্র সমীপে নিবেদন করল, হে আল্লাহ্! আমি আপনার দরবার থেকে বিতাড়িত ও অভিশপ্ত হয়েছি আদমের কারণে। এটা শুনে রব বললেন- হে ইবলীস ! তুই তোর লিপির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ কর। সেদিকে বরং তোকরে সে দেখতে পেল তাতে লেখা রয়েছে-আল্লাহ্র যে বান্দা তাঁর নির্দেশ অমান্য করে তার শাস্তি হচ্ছে লানত- অর্থাৎ আল্লাহ্র রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া । সে লিপি পাঠান্তে ইবলীস নিরাশ ও লজ্জিত হয়ে বলল-

৩৮:৭৯ قَالَ رَبِّ فَاَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ

উচ্চারণঃ কা-লা রাব্বি ফাআংজির্‌নী-ইলা- ইয়াওমি ইউব্‌‘আছূ’ন।

অর্থঃ সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।’ 

হে আল্লাহ্! আপনার সমীপে আমার দ্বিতীয় আবেদন- আমাকে আদম সন্তানের অস্থিমজ্জা ও রগসমূহে প্রবেশের সুযোগ দিন, আর আমাকে তাদের দৃষ্টির আড়ালে রাখুন। ইবলীসের এ আবেদনের উত্তরে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করলেন-

৩৮:৮০ قَالَ فَاِنَّكَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ  ৩৮:৮১ اِلٰی یَوۡمِ الۡوَقۡتِ الۡمَعۡلُوۡمِ

উচ্চারণঃ কা-লা ফাইন্নাকা মিনাল্‌ মুংজারীন। ইলা-ইয়াওমিল ওয়াক’তিল মা‘লূম।

অর্থঃ তিনি বললেন, আচ্ছা তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে, ‘অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’

সে আদম (আ)-এর অবস্থানস্থলে গিয়ে বসে এবং সুযোগ তালাশ করতে থাকে! এবার ইবলীস বলল (আল্লাহর ভাষায়)-

৩৮:৮৩ اِلَّا عِبَادَكَ مِنۡهُمُ الۡمُخۡلَصِیۡنَ   ৩৮:৮২ قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَاُغۡوِیَنَّهُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ

(৮২) কা-লা ফাবি ‘ইঝঝাতিকা লাউগ্‌বি য়ান্নাহুম্‌ আজমা‘ঈন। (৮৩) ইল্লা-‘ইবা-দাকা মিন্‌হুমুল্‌ মুখলাসীন।

(৮২) সে বলল, ‘আপনার ইজ্জতের কসম! আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করে ছাড়ব।’  (৮৩) তাদের মধ্য থেকে আপনার একনিষ্ঠ বান্দারা ছাড়া।

 তার কথার জবাবে আল্লাহ্ পাক বলেন-

৩৮:৮৫ لَاَمۡلَـَٔنَّ جَهَنَّمَ مِنۡكَ وَ مِمَّنۡ تَبِعَكَ مِنۡهُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ৩৮:৮৪ قَالَ فَالۡحَقُّ ۫ وَ الۡحَقَّ اَقُوۡلُ

উচ্চারণঃ  কা-লা ফাল্‌হাক্কু ওয়াল্‌ হাক্কা আকূ’ল। (৮৫) লাআম্‌লাআন্না জাহান্নামা মিংকা ওয়া মিম্মাং তাবি‘আকা মিন্‌হুম্‌ আজমা‘ঈন।

অর্থঃ (৮৪) আল্লাহ বললেন, ‘এটি সত্য আর সত্য-ই আমি বলি’  (৮৫)  ‘তোমাকে দিয়ে এবং তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করত তাদের দিয়ে নিশ্চয় আমি জাহান্নাম পূর্ণ করব।’


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url