জিন জাতির সৃষ্টি ও ধ্বংসের আশ্চর্য কাহিনী




জিন জাতির সৃষ্টি ও ধ্বংস


আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টির বহু পূর্বে জিন জাতি সৃষ্টি করে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহ্ তাআলা স্বয়ং পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে জিন জাতির কথা উল্লেখ করেছেন। আর মানব জাতিকে যে উদ্দেশে সৃষ্টি করা হয়েছে অবিকল সেই একই উদ্দেশে আল্লাহ্ তাআলা জিন জাতিকেও সৃষ্টি করেছেন। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে (অমা-খালাক্বতুল জিন্না অল ইনসা ইল্লা-লিইয়া'বুদূন'।) অর্থাৎ আমি জিন ও মানব জাতিকে কেবল মাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি ।


জিন ও মানুষের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য


এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে সূরা জিন নামে একটি সূরাও নাযিল হয়েছে। জিন এবং মানুষের মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে যেমন সাদৃশ্য রয়েছে তেমনি আবার বিভিন্ন দিক দিয়ে বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। মানুষের প্রতি যেমন আল্লাহর ইবাদতবন্দেগীর আদেশ রয়েছে তেমনি জিনদের প্রতিও রয়েছে । মানবজাতির মধ্যে যেমন অনেকে আল্লাহর নির্দেশ পুরাপুরিভাবে পালন করে আবার অনেকে তার বিরোধিতা করে। জিনদের ভিতরও এ ব্যাপারে ঠিক অনুরূপ অবস্থা বিদ্যমান। যেমন- পরকালে নেকীবান্দাহর হিসাব নিকাশ হবে, বিচার হবে, বিচারের পর ফলাফল হিসাবে কেউ জান্নাতবাসী হবে আবার কেউ দোজখে যাবে, জিনদেরও তাই হবে। মানুষের মধ্যে যেমন- নারী-পুরুষ আছে, বিয়ে-শাদী, সন্তান উৎপাদন এবং জন্ম মৃত্যু প্রথা রয়েছে তদ্রূপ জিনদের মধ্যেও আছে। মানুষের মধ্যে যেরূপ রিপুর প্রভাব এবং তার ফলে তারা সৎ ও অসৎ হয, জিনদেরও ঠিক সেই একই অবস্থা।


পক্ষান্তরে মানুষের সাথে জিনদের কিছু পার্থক্যও রয়েছে। যেমন, মানুষ মাটির তৈরি কিন্তু জিন আগুনের তৈরি। মানুষ দৃশ্যমান শরীরিও জীব কিন্তু জিন অদৃশ্যমান অশরীরি জীব।মানুষের অবস্থান চলাফেরা, সকল কাজকর্ম জিনেরা দেখে পক্ষান্তরে জিনদের কোন কিছুই মানুষেরা দেখতে পায় না। জিনেরা সাধারণত : তাদের ইচ্ছানুসারে একমাত্র শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর পবিত্র আকৃতি ছাড়া যে কোন মানুষ ও পশু-পাখির রূপ ধারণ করতে পারে। পক্ষান্তরে মানুষ নিজের পরিবর্তন করে ইচ্ছা করলেই অন্যের আকৃতি ধারণে সক্ষম নয়। সাধারণ অবস্থায় জিন মানুষের নানাভাবে উপকার করতে পারে, আবার ক্ষতিও করতে পারে। পক্ষান্তরে জিনের জন্য মানুষের তেমন কিছু করার সুযোগ ও সামর্থ নেই ।


জিন ও ফেরেস্তাদের মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য


কিছু বিষয়ে ফেরেস্তাদের সাথেও জিনদের সাদৃশ্য আছে। যেমন- ফেরেস্তাদের ন্যায় জিনরাও অদৃশ্যমান-অশরীরি ও দ্রুতগতি সম্পন্ন জীব। ফেরেস্তাদের সাথে এদের বৈসাদৃশ্যও আছে। যেমন ফেরেস্তা নূরের তৈরি আর জিনরা তৈরি আগুনের। জিনদের মধ্যে নারী-পুরুষ আছে কিন্তু ফেরেশতাদের মধ্যে তা নেই। ফেরেস্তাদের আহার-বিহার আরাম-নিদ্রার প্রয়োজন নেই। কিন্তু জিনদের এ সবের প্রয়োজন আছে। ফেরেস্তারা সবাই সর্বদা আল্লাহর হুকুম পালনেই রত, এদের একমাত্র কাজ ইবাদত। কিন্তু জিনদের মধ্যে কিছুসংখ্যক আল্লাহর অনুগত আর কিছুসংখ্যক অবাধ্য। আদালতে আখিরাতে ফেরেস্তাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না। পক্ষান্তরে জিনদের হিসাব নিকাশ হবে, পাপ পূণ্যের শাস্তি বা পুরস্কার রয়েছে। ফেরেস্তাদের রোগব্যাধি স্পর্শ করে না। তারা পিতার ঔরষে ও মাতার গর্ভে জন্মগ্রহণ করে না। তাদের মৃত্যু হবে সকলের শেষে। পক্ষান্তরে জিনদের রোগ-ব্যাধি, জ্বরা-মৃত্যু আছে এবং মানুষের ন্যায় তারাও পানাহার করে, তন্দ্রা ও নিদ্রাভিভূত হয়, পিতা-মাতার মাধ্যমে তারা জন্মগ্রহণ করে। মানুষের ন্যায় তারাও কাম ক্রোধ লোভ, মোহ-মদ-মাৎসর্য তথা ষড় রিপুর অধীন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সময় একদল জিন কোরআন শরীফ তিলাওয়াত শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং এ কথা তারা তাদের স্বজাতীর কাছেও প্রকাশ করে। আল্লাহ্ তাআলা রাসূল (সাঃ)-কে তাদের ইমান আনার কথা জানিয়ে দেয়ার জন্য তাঁর ওপরে সূরা জিন নাযিল করেন। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন- আমি জিন জাতিকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছি এবং মানব জাতিকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করে গৌরবান্বিত করেছি।


জিন জাতির আদি পিতা


মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে সর্ব শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর ক্রমে ক্রমে তাঁকে দিয়েই মানব জাতির বংশ বিস্তার করেছে। তদ্রূপ জিন জাতিরও একজন আদি পিতা ছিল এবং তাকে দিয়েই জিন জাতির বংশ বিস্তার লাভ করেছে। জিন জাতির আদি পিতার নাম ক্ষুমাজান্না হল তার উপাধি। এর আর একটি নাম মারজ। এ জিন আবুল জিন এবং তারাননুস জিন নামেও মানব সমাজে পরিচিত। জিন জাতি আগুন দিয়ে সৃষ্টি, তাই তাদের চরিত্রে সর্বদাই উগ্রতার ভাব প্রকাশ পাচ্ছিল । ন্যায় নীতির অনুসরণ না করে ও ন্যায়-অন্যায় সৎ-অসৎ কাজের কোনরূপ বিচার না করে যখন যা ইচ্ছা তাই করতে লাগল । নিজেরা পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদ শুরু করে দিল ।


জিন জাতির পয়গাম্বর


এ অবস্থায় আল্লাহ্ তাআলা তাদের ওপরে কিছু আদেশ-নিষেধ ও বাধ্য-বাধ্যকতা আরোপ করে তাদেরকে রীতি-নীতি অনুসারে চলার নির্দেশ দিলেন এবং তাদের জন্য একজন বাদশাহ ও গয়গাম্বর পাঠালেন। তিনি তাদেরকে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলার, সৎপথ অবলম্বন এবং অসৎপথ বর্জনের প্রেরণা ও উদ্দীপনা দান করার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। কিছুদিন জিনরা ভালভাবেই তাদের বাদশাহ ও পয়গাম্বরের নির্দেশ অনুসারে সৎপথে থেকে কাল যাপন করতে লাগলো।


কিন্তু কিছু দিন পর আবার তারা পাপাচারী হয়ে উঠলো  এবং এ কাজে বাধাদানকারী বাদশাহকে তারা অমান্য করলো এবং হত্যা করলো। এভাবে তারা ভীষণ পাপাচারী হয়ে উঠল ।


তাদের সৎপথে আনার জন্য আল্লাহ্ পাক পুনরায় একজন পয়গাম্বর প্রেরণ করলেন। কিন্তু তিনিও সফল হতে পারলেন না। মাত্র কিছুসংখ্যক জিন তাঁর হিদায়েত মেনে সৎপথে প্রত্যাবর্তন করল। অবশিষ্ট সকলেই পয়গাম্বরের কথা অমান্য করে পাপাচারে মত্ত ছিল। পুনরায় তাদের নিকট আল্লাহ্ প্রেরিত পয়গাম্বরকে হত্যা করল। আল্লাহর দয়া সীমাহীন । তাই তিনি জিনদের পাপের শাস্তি প্রদান না করে তাদেরকে হিদায়েতের নিমিত্ত পুনরায় একজন পয়গাম্বর পাঠালেন। এভাবে আবুল জিন জিনদের পিতার পর থেকে প্রায় ছত্রিশ হাজার বছর সময়ের মধ্যে জিনরা বহুসংখ্যক পয়গাম্বর হত্যা করার পর আল্লাহ্ তাআলা জিনদের প্রতি অত্যন্ত নাখোশ হলেন এবং তাদেরকে ধ্বংস করার নিমিত্তে আসমান হতে অসংখ্য ফেরেশতা পাঠালেন।


জিন জাতির ধ্বংস


আল্লাহ তাআলার নির্দেশ ফেরেশতারা কোটি কোটি জিন হত্যা করে ফেলল। কেবল মাত্র যে সকল ঈমানদার জিন পাপী জিনদের ভয়ে বন জঙ্গলে ও পাহাড়-পর্বতের গুহায় বসে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত ছিল তারাই ফেরেশতাদের হাত হতে রক্ষা পেল। দুনিয়ার অধিকাংশ জিন এভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও যে সকল ঈমানদার জিন রক্ষা পেয়েছিল তাদের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে কালক্রমে আবার জিনদের দ্বারা দুনিয়া পূর্ণ হয়ে উঠল। কিন্তু তাদের অধিকাংশই আবার পাপাচারে লিপ্ত হল। এদেরকে সৎপথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহ্ তাআলা পুনরায় একজন পয়গাম্বর পাঠালেন। এবারও সকল জিন হিদায়েত গ্রহণ করল না। মাত্র কিছুসংখ্যক ছাড়া বাকী সব জিনই বিপথে থেকে পয়গাম্বরের সাথেও শত্রুতা করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত এবারও তারা তাদের পয়গাম্বরকে হত্যা করল। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কিছুসংখ্যক পুণ্যবান জিন বনে জঙ্গলে গিয়ে গোপনে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হল ।


পাপীষ্ট জিনদের আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে শাস্তি দেবার জন্য পুনরায় ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতাদের হাতে পাপী জিনরা সকলেই নিহত হল এবং সামান্য কিছু সংখ্যক পুণ্যবান জিন দুনিয়াতে বেঁচে রইল। এদের মধ্যে একজন শিক্ষিত ও সর্বাপেক্ষা ধার্মিক জিন ছিল। তার নাম ছিল চালপালিশ । এবার আল্লাহ্ তাকেই জিনদের বাদশাহ এবং ধর্মীয় নেতা নির্বাচন করে দিলেন। খুব অল্পদিনের মধ্যেই চালপালিশ ইবাদত-বন্দেগী, আল্লাহ্ প্ৰেম এবং প্রজা পালনে বিশেষ সুনাম অর্জন করলেন, তিনি নিজে ধর্মপথে মজবুত থেকে আল্লাহ্ তাআলার ইবাদত করতে লাগলেন। বেশ কিছুদিন যাবত জিন জাতির উপরে চালপালিশের একচ্ছত্র আধিপত্য ও জিনদের ধর্মপথে অবস্থিতি অক্ষুণ্ণ থাকল। অতঃপর আবার বহুসংখ্যক জিন পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। এদের সাথে চালপালিশ নিজেও ধীরে ধীরে নীতিভ্রষ্ট হয়ে পাপকাজে লিপ্ত হল । তিনি ভুলে গেলেন যে, তিনি আল্লাহর প্রেরিত ও মনোনীতি একজন নেতা ।


তখন আল্লাহ্ তাআলা ফেরেশতা জিবরাঈল (আ)-কে পাঠিয়ে চালপালিশকে সতর্ক করে দিলেন যে, তুমি তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে কোন্ পথে চলছ? এপথ যে তোমাকে বিনাশের কোলে পৌঁছাবে তা কেন বুচ্ছনা? জিব্রাঈলের সতর্কীকরণে চালপালিশ এর চেতনা ফিরে পেল । তিনি সৎ ও সঠিক পথে প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় নিজের ও জাতির কল্যাণকর কার্যসমূহে মনোনিবেশ করলেন। জিনদের হিদায়েতে একান্তভাবে আত্মনিয়োগ করলেন। কিন্তু দুষ্ট জিনদের প্ররোচনায় চালপালিশ এর আবার পরিবর্তন ঘটল-সে পাপের স্রোতে নিজকে ভাসিয়ে দিল । এবার আর আল্লাহ্ তার এ পাপ সহ্য করলেন না।

চালপালিশ পয়গাম্বরীর এক হাজার বছর পূর্ণ হয়ে গেলে আল্লাহর নির্দেশে আসমান হতে অগণিত ফেরেশতা এসে চালপালিশসহ সমগ্র জিন জাতিকে ধ্বংস করে দিল। কিন্তু আল্লাহর মর্জীতে এবারও কিছু সংখ্যক জিনেরা ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা পেল। তাদের দিয়ে আল্লাহ আবার দুনিয়াকে আবাদ করতে চাইলেন কিন্তু দুনিয়াকে এরা দোযখের তূল্য করে তুলল ।


এদের মধ্যে দু,জন জিন ভাল ছিল। তাদের মধ্যে বিলীকা নামক এক জিন  ছিল। আল্লাহ্ তাআলা এবার অকে পয়গাম্বরী ও বাধশাহী দান করতঃ জিনদের শাসন ও হিদায়েতের নির্দেশ দিলেন। আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে তিনি তদানুসারে কাজ শুরু করে দিলেন। অচিরেই জিনদের ধর্মভাব ও সুখ-শান্তি ফিরে এল। বর্ণিত আছে বিলীকা যখন বাদশাহী ও নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছিলেন, তখন তার বয়স ছিল পঁচিশ হাজার বছর। এ বয়সে তিনি জাতির ওপরে কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে চল্লিশ বছর পর্যন্ত যথাযথভাবে তা পালন ও রক্ষা করেন। এরপর পুনরায় তার ভেতরেও পরিবর্তন আসতে থাকে। ধীরে ধীরে তার অধীনস্থ জিনরাও যেমন পাপচারী ও অসদাচারী হয়ে উঠে, সাথে সাথে তাদের সর্বাধিনায়ক ও ধর্মীয় নেতাও পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে আল্লাহ্ তাআলার গজবও আবার তাদের উপর নেমে আসে। এ গজবে কিছু সংখ্যক জিন ব্যতীত বিলীকাসহ সমস্ত জিন ধ্বংস হয়ে গেল। তারপর তাদের বংশ বৃদ্ধি হয়ে দুনিয়া আবার জিনে পূর্ণ হয়ে গেল । এবার আল্লাহ্ তাদের শাসন ও সৎপথ প্রদর্শনের ভার অর্পণ করলেন হামুস নামক এক মহৎ জিনের উপর । আল্লাহ্ তাকেও জিনের বাদশাহ ও পয়গাম্বরী দান করলেন। হামুসকে পয়গাম্বরী দান করে আল্লাহ্ তাআলা তাকে তার পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করে দিয়ে বললেন, নির্দেশ অনুসারে তুমি তোমার দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ যথাযথভাবে পালন করে চলবে। নতুবা তোমার অবস্থা পূর্ববর্তী পয়গাম্বরদের অপেক্ষাও ভয়ঙ্কর হবে। এর জবাবে হামুসও আল্লাহর নিকট নিজ কর্তব্য পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিল, হে মাবুদ! আমি সারা জীবন মনে প্রাণে আপনার নির্দেশ পালন করে যাব। তাতে কোনরূপ ত্রুটি করব না ।


হামুসের জিনরা কিছুদিন খুবই ভালভাবে চলল, সৎজীবন যাপন করল । আল্লাহর নির্দেশ পালনে কোনরূপ গাফলতি করল না। কিন্তু কিছুকাল পর আবার তারা ধীরে ধীরে পূণ্যের পথ পরিহার করে পাপ পথের দিকে ধাবিত হতে থাকল । দেখতে দেখতে তারা আল্লাহর নাফরমান হয়ে গেল। হামুস অনেক চেষ্টা করেও তাদেরকে ফিরাতে পারল না; বরং তারা উল্টা হামুসকেই ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতে শুরু করল। কেউ কেউ তাকে নানারূপ প্রলোভনও দেখাতে লাগল । প্রথম প্রথম হামুস তাদের কথায় কর্ণপাত না করলেও শেষ পর্যন্ত নিজের মনোবল অক্ষুন্ন রাখতে পারল না। সেও তাদের দলভুক্ত হয়ে গেল ।


তখন জিনদের আদি-পিতা তারাননুস-এর জন্মের পর একলক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়েছিল। এ সময় জিনদের ওপর পুনরায় আল্লাহ্ তাআলার ভীষণ আযাব নেমে আসল। আল্লাহ্ তাআলা ফেরেশতাদেরকে আদেশ করলেন, তোমরা এবার সমগ্র জিন সম্প্রদায়কে বিনাশ করে ফেল । আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে অসংখ্য ফেরেশতা নানাবিধ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জিনকুলকে ধ্বংস করার জন্য দুনিয়ায় অবতীর্ণ হয়। এবার জিনরাও আর পূর্বের ন্যায় থাকল না তারাও নানাবিধ অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ফেরেশতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হল । দু,দলে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল । কিন্তু আল্লাহ্ প্রেরিত ফেরেশতারা ছিলেন আল্লাহর শক্তিতে শক্তিমান। তাঁদের সাথে সামান্য জিনদের পেরে উঠার কথা নয়। তারা প্রাণপণ যুদ্ধ করে একজন ফেরেশতাকেও হত্যা করা তো দূরের কথা সামান্য আহতও করতে পারল না। বরং তারা নিজেরাই ফেরেশতাদের অস্ত্রাঘাতে ঝাঁকে ঝাঁকে ভূতলশায়ী হতে লাগল। শেষ পর্যন্ত দুই চারটি জিন মাত্র কোনরূপে পাহাড়-পর্বত ও বন-জঙ্গলে আত্মগোপন করে প্রাণ রক্ষা করল এবং অবশিষ্ট সমগ্র জিনই ফেরেশতাদের হাতে প্রাণ হারাল !


এসময় ফেরেস্তারা তাদের মধ্যে অতি সুন্দর এক বালক জিনকে দেখতে পেল এবং তাকে দেখে তাদের মনে মমতার উদয় হল। তখন ফেরেস্তারা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করল হে মাবুদ! এ বালক জিনটির প্রতি আমাদের মমতার উদয় হয়েছে। আপনার অনুমতি দিলে আমরা একে আসমানে এনে লালন-পালন করব। আল্লাহ্ তাআলা ফেরেশতাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করে তাহাদেরকে অনুমতি দান করলেন। ফেরেশতারা এ সুন্দর জিন বালকটির নাম দিল, ‘ইবলীস।' ফেরেশতারা যখন তাকে প্রথম আসমানে নিয়ে আসল ঐ সময় সে সুন্দর জিনটি এক হাজার বছর বয়স্ক বালক মাত্র। তার প্রতি ফেরেশতাদের মনে এরূপ অহেতুক দয়া ও মমতা উদয়ের পেছনে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলার কোন নিগূঢ় উদ্দেশ্য নিহিত ছিল ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url