সিরাতুন নবী (সাঃ) || (পর্ব-৪০) || আক্বাবাহর প্রথম বায়আত বা আনুগত্যের শপথ ||





আক্বাবাহর প্রথম বায়আত বা আনুগত্যের শপথ

পূর্বে আমি বলেছি যে, একাদশ নবুওয়াত বর্ষে হজ্বের মৌসুমে মদিনার ছয়জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট অঙ্গীকার করেছিলেন যে, ‘আমরা নিজ জাতির নিকট গিয়ে আপনার নবুওয়াতের কথা প্রচার করব।’

এর ফল হল যে, পরবর্তী বছর যখন হজ্বের মৌসুম এল (অর্থাৎ দ্বাদশ নবুওয়াত বর্ষের জিলহজ্ব মোতাবেক ৬২১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই) তখন বারোজন লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে এসে উপস্থিত হলেন। এদের মধ্যে জাবির বিন আব্দুল্লাহ বিন রেআব ছাড়া অবশিষ্ট পাঁচজন তাঁরাই ছিলেন যাঁরা পূর্বের বছর এসেছিলেন। এছাড়া অন্য সাত জন ছিলেন নতুন। নাম হল যথাক্রমেঃ



এর মধ্যে কেবল শেষের দুজন আউস গোত্রের। তাছাড়া বাকী সকলেই ছিলেন খাযরাজ গোত্রের।[১] এ লোকগুলো মিনার আক্বাবাহর নিকটে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর প্রচারিত দ্বীনের ব্যাপারে কিছু কথার উপর অঙ্গীকার গ্রহণ করেন। ঐ কথাগুলো সবই পরবর্তীকালে সম্পাদিত হুদায়বিয়াহর সন্ধিপত্র এবং মক্কা বিজয়ের সময় মহিলাদের নিকট থেকে গৃহীত অঙ্গীকারনামার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আক্বাবাহর এ অঙ্গীকার নামার ঘটনা সহীহুল বুখারী শরীফে উবাদাহ বিন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘এসো, আমার নিকট এ কথার উপর অঙ্গীকার গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকেই অংশীদার করবে না, চুরি করবে না, যেনা করবে না, নিজ সন্তানকে হত্যা করবেনা, হাত পায়ের মাঝে মন গড়া কোন অপবাদ আনবে না এবং কোন ভাল কথায় আমাকে অমান্য করবে না। যারা এ সকল কথা মান্য এবং পূর্ণ করবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাদের পুরষ্কার রয়েছে। কিন্তু যারা এগুলোর মধ্যে কোনটি করে বসে এবং তার শাস্তি এখানেই প্রদান করা হয় তবে সেটা তার মুক্তিলাভের কারণ হয়ে যাবে। আর যদি কেউ এসবের মধ্যে কোন কিছু করে বসে এবং আল্লাহ তা গোপন রেখে দেন তবে তার ব্যাপারটি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া হবে, চাইলে তিনি শাস্তি দিবেন, নচেৎ ক্ষমা করে দিবেন। উবাদাহ (রাঃ) বলেছেন এ সব কথার উপরে আমরা নাবী (ﷺ)-এর নিকট অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম।[২]

জামরায়ে আক্বাবাহ

 عَقَبَة (অক্ষর তিনটাতে যবর) এর অর্থ হচ্ছে পাহাড়ের সুড়ঙ্গ বা সংকীর্ণ পাহাড়ী পথ। মক্কা থেকে মিনায় যাতায়াতের জন্য মিনার পশ্চিম দিকে একটি সংকীর্ণ পাহাড়ী পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হত। এ সুড়ঙ্গ পথের স্থানটিই আক্বাবাহ নামে প্রসিদ্ধ। দশই জিলহজ্জ্ব তারীখে যে জামরাকে (পাথরের মূর্তি) কংকর নিক্ষেপ করা হয় সেটা এ সুড়ঙ্গ পথের মাথায় অবস্থিত বলে একে জামরায়ে আক্বাবাহ বলা হয়। এ জামরার দ্বিতীয় নাম জামরায়ে কুবরা। বাকী জামরা দুটি পূর্ব দিকে অল্প দূরে অবস্থিত। মিনার যে ময়দানে হাজীগণ অবস্থান করেন সেই প্রান্তরটি তিনটি জামরার পূর্বে রয়েছে কাজেই সমস্ত লোকের ঘুরাফিরা ঐ দিকেই হত এবং কংকর নিক্ষেপের পর এদিকে মানুষের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেত। একারণে নবী (সাঃ) শপথ গ্রহণের এ সুড়ঙ্গটিকেই নির্বাচন করেছিলেন। এ কারণেই একে বায়আতে আক্বাবাহ বা আক্বাবাহর অঙ্গীকার বা আক্বাবাহর শপথ বলা হয়। পাহাড় কেটে এখন প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ
[১] রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ৮৫ পৃঃ। ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ৪৩১-৪৩৩ পৃঃ।
[২] সহীহুল বুখারী বাবু বা’দা হালাওয়াতিল ঈমান ১/৭ পৃঃ। বাবু অফদিল আনসার ১/৫৫০-৫৫১ শব্দ এ বাবেরই , বাবু কাওলেহী তা‘আলা, ২য় খন্ড ৭২৭ পৃৃৃঃ। বাবুল হদুদে কাফ্ফারাতুন ২/১০০৩ পৃঃ।



******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url