ইউসুফ (আঃ)-এর জীবনী (৮ম পর্ব) || পিতার নির্দেশে ছেলেদের পুনরায় মিসরে গমন || ইউসুফ (আঃ) এর আত্মপ্রকাশ এবং ভাইদের ক্ষমা প্রার্থনা ||
বেনিয়ামীনকে মিসরে রেখে আসায় পিতার নিকটে ছেলেদের কৈফিয়ত
কেন‘আনে ফিরে এসে পিতার নিকটে তারা বেনিয়ামীনকে রেখে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে এবং সেই সাথে তারা নিজেদের কথার সত্যতা প্রমাণের জন্য মিসর প্রত্যাগত অন্যান্য কেন‘আনী কাফেলাকে সাক্ষী মানল এবং পিতাকে বলল, وَاسْأَلِ الْقَرْيَةَ الَّتِي كُنَّا فِيهَا وَالْعِيرَ الَّتِي أَقْبَلْنَا فِيهَا وَإِنَّا لَصَادِقُونَ ‘(হে পিতা!) আপনি জিজ্ঞেস করুন ঐ জনপদের লোকদের, যেখানে আমরা ছিলাম এবং (জিজ্ঞেস করুন) ঐসব কাফেলাকে যাদের সাথে আমরা এসেছি। আমরা নিশ্চিতভাবেই (আপনাকে) সত্য ঘটনা বলছি’ ( ইউসুফ ৮২)। (কিন্তু ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত পিতা তাদের কথায় কর্ণপাত না করে বললেন),
بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْراً فَصَبْرٌ جَمِيْلٌ عَسَى اللهُ أَن يَّأْتِيَنِيْ بِهِمْ جَمِيْعاً إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيْمُ الْحَكِيْمُ ‘বরং তোমরা মনগড়া একটা কথা নিয়েই এসেছ। এখন ধৈর্যধারণই উত্তম। সম্ভবতঃ আল্লাহ তাদের সবাইকে (ইউসুফ ও বেনিয়ামীনকে) একসঙ্গে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। তিনি বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (৮৩)। ‘অতঃপর তিনি তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, হায় আফসোস ইউসুফের জন্য! (আল্লাহ বলেন,) এভাবে দুঃখে তাঁর চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গেল এবং অসহনীয় মনস্তাপে তিনি ছিলেন ক্লিষ্ট’ (৮৪)। ছেলেরা তখন তাঁকে বলতে লাগল, ‘আল্লাহর কসম! আপনি তো ইউসুফের স্মরণ থেকে নিবৃত্ত হবেন না, যে পর্যন্ত না মরণাপন্ন হন কিংবা মৃত্যুবরণ করেন’(৮৫)। ইয়াকূব বললেন,
إِنَّمَا أَشْكُوْ بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللهِ وَأَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُوْنَ، يَا بَنِيَّ اذْهَبُوْا فَتَحَسَّسُوْا مِنْ يُوسُفَ وَأَخِيْهِ وَلاَ تَيْأَسُوْا مِنْ رَّوْحِ اللهِ إِنَّهُ لاَ يَيْأَسُ مِنْ رَّوْحِ اللهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُوْنَ-(يوسف ৮৬-৮৭ )-
‘আমি তো আমার অস্থিরতা ও দুঃখ আল্লাহর কাছেই পেশ করছি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না’ (৮৬)। ‘হে বৎসগণ! যাও ইউসুফ ও তার ভাইকে তালাশ কর এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত কেউ নিরাশ হয় না’ (ইউসুফ ১২/৮২-৮৭)।
উপরোক্ত ৮৬ ও ৮৭ আয়াতে বর্ণিত ইয়াকূব (আঃ)-এর বক্তব্যে ইউসুফ ও বেনিয়ামীনকে ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। হ’তে পারে ইউসুফকে হারানোর দীর্ঘ বিরহ-বেদনা এবং নতুনভাবে পাওয়া বেনিয়ামীন হারানোর কঠিন মানসিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার জন্য আল্লাহ পাক তাঁকে অহী মারফত ইঙ্গিত দিয়ে থাকবেন অথবা আল্লাহ তাকে উক্ত মর্মে ওয়াদা দিয়ে থাকবেন। ইয়াকূব (আঃ)-এর বক্তব্য إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللهِ ‘আমি আমার অস্থিরতা ও দুঃখ আল্লাহর কাছে পেশ করছি’ (ইউসুফ ১২/৮৬), একথার মধ্যে তাঁর কঠিন ধৈর্যগুণের প্রকাশ ঘটেছে।
পিতার নির্দেশে ছেলেদের পুনরায় মিসরে গমন
ইউসুফ ও বেনিয়ামীনকে খুঁজে বের করার জন্য ইয়াকূব (আঃ) ছেলেদেরকে এরূপ কঠোর নির্দেশ ইতিপূর্বে কখনো দেননি। তাঁর দৃঢ়তায় ছেলেদের মধ্যেও আশার সঞ্চার হ’ল। বেনিয়ামীন মিসরে থাকা নির্দিষ্ট ছিল। কিন্তু ইউসুফের ব্যাপারে কোন আশা ছিল না।
বলা হয়ে থাকে যে, إذا أراد الله أمرًا هيأ له الأسباب ‘আল্লাহ যখন কোন কাজের ইচ্ছা করেন, তখন তার কার্যকারণ সমূহ প্রস্ত্তত করে দেন’। বেনিয়ামীনের উদ্দেশ্যে মিসর যাত্রার মধ্যেই ইউসুফ উদ্ধারের বিষয়টি লুকিয়েছিল, যেটা কারু জানা ছিল না। তাই আল্লাহর ইচ্ছায় ভাইয়েরা সবাই মিসরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হ’ল।
ইউসুফের সৎ ভাইয়েরা পিতার নির্দেশক্রমে মিসর পৌঁছল এবং ‘আযীযে মিছর’-এর সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা তাঁর কাছে নিজেদের সাংসারিক অভাব-অনটনের কথা পেশ করল। এমনকি পণ্যমূল্য আনার মত সঙ্গতিও তাদের নেই বলে জানাল। তদুপরি পরপর দুই পুত্রকে হারিয়ে অতিবৃদ্ধ পিতার করুণ অবস্থার কথাও জানালো।
যেমন আল্লাহ বলেন,
فَلَمَّا دَخَلُوْا عَلَيْهِ قَالُوْا يَا أَيُّهَا الْعَزِيْزُ مَسَّنَا وَأَهْلَنَا الضُّرُّ وَجِئْنَا بِبِضَاعَةٍ مُّزْجَاةٍ فَأَوْفِ لَنَا الْكَيْلَ وَتَصَدَّقْ عَلَيْنَا إِنَّ اللهَ يَجْزِي الْمُتَصَدِّقِيْنَ-(يوسف ৮৮)-
‘অতঃপর যখন তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছল, তখন বলল, হে আযীয! আমরা ও আমাদের পরিবার বর্গ কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি এবং আমরা অপর্যাপ্ত পুঁজি নিয়ে এসেছি। আপনি আমাদেরকে পুরোপুরি বরাদ্দ দিন এবং আমাদেরকে অনুদান দিন। আল্লাহ দানকারীদের প্রতিদান দিয়ে থাকেন’ (ইউসুফ ১২/৮৮)। উল্লেখ্য যে, এখানে ছাদাক্বার অর্থ অনুদান এবং স্বল্প মূল্যের বিনিময়ে পুরোপুরি দান করা।
ইউসুফ (আঃ) এর আত্মপ্রকাশ এবং ভাইদের ক্ষমা প্রার্থনা
পরিবারের অনটনের কথা শুনে এবং পিতার অন্ধত্ব ও অসহায় অবস্থার কথা শুনে ইউসুফ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি আল্লাহর হুকুমে নিজেকে প্রকাশ করে দিলেন এবং বললেন, قَالَ هَلْ عَلِمْتُمْ مَا فَعَلْتُم بِيُوسُفَ وَأَخِيهِ إِذْ أَنتُمْ جَاهِلُونَ- ‘তোমাদের কি জানা আছে যা তোমরা করেছিলে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সাথে? যখন তোমরা (পরিণাম সম্পর্কে) অজ্ঞ ছিলে’ (৮৯)। ‘তারা বলল, إِنَّكَ لَأَنتَ يُوسُفُ؟ তবে কি তুমিই ইউসুফ? তিনি বললেন, أَنَا يُوسُفُ وَهَـذَا أَخِيْ قَدْ مَنَّ الله ُعَلَيْنَا، আমিই ইউসুফ, আর এ হল আমার (সহোদর) ভাই। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি তাক্বওয়া অবলম্বন করে ও ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ এহেন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না’ (৯০)। ‘তারা বলল, تَاللهِ لَقَدْ آثَرَكَ اللهُ عَلَيْنَا وَإِنْ كُنَّا لَخَاطِئِيْنَ- ‘আল্লাহর কসম! আমাদের উপরে আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং আমরা অবশ্যই অপরাধী ছিলাম’ (৯১)। ‘ইউসুফ বললেন, لاَ تَثْرَيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ- ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি সকল দয়ালুর চাইতে অধিক দয়ালু’ (ইউসুফ ১২/৮৯-৯২)।
ইউসুফ (আঃ) এর ব্যবহৃত জামা প্রেরণ
ভাইদেরকে মাফ করে দেওয়ার পর ইউসুফ তাঁর ব্যবহৃত জামাটি বড় ভাইদের হাতে দিয়ে বললেন, এই জামাটি নিয়ে পিতার চেহারার উপরে রেখো। তাতেই তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। অতঃপর তাঁকে সহ তোমাদের সকলের পরিবারবর্গকে নিয়ে এখানে চলে এসো। একটি বর্ণনায় এসেছে যে, এই সময় ইয়াহূদা বলেছিল, বড় ভাই হিসাবে পিতা সেদিন আমার হাতেই তোমাকে সোপর্দ করেছিলেন। কিন্তু আমি ভাইদের চাপের মুখে তোমার জামায় মিথ্যা রক্ত মাখিয়ে পিতাকে দেখিয়েছিলাম। আজ আমি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। তোমার এ জামাটি আমিই স্বহস্তে পিতার মুখের উপরে রাখব। এর বিনিময়ে তিনি যদি আমাকে ক্ষমা করে দেন। ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, এই বড় ভাই-ই সে সময় তিনদিন ধরে গোপনে ইউসুফকে কূয়ায় দেখাশুনা করতেন। এরই পরামর্শে ভাইয়েরা তাকে হত্যা করেনি। বেনিয়ামীনকে হারিয়ে মনের দুঃখে এই বড় ভাই-ই মিসর থেকে আর কেন‘আনে ফিরে যায়নি। তাই আজকে ইউসুফকে ফিরে পাওয়ার সুসংবাদ এবং তার জামা নিয়ে পিতার চেহারার উপরে রাখার এ মহান দায়িত্ব পালনের অধিকার স্বভাবতঃ তার উপরেই বর্তায়। অতঃপর ইউসুফের জামা নিয়ে ভাইদের কাফেলা মিসর ত্যাগ করে কেন‘আনের পথে রওয়ানা হ’ল। ওদিকে আল্লাহর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রায় ২৫০ মাইল দূরে ইয়াকূবের নিকটে উক্ত জামার গন্ধ পৌঁছে গেল। তিনি আনন্দের আতিশয্যে সবাইকে বলে ফেললেন যে, إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَ ওগো তোমরা শুনো! আমি ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি’ (১২/৯৪)। নিঃসন্দেহে এটি ছিল মু‘জেযা, যা আল্লাহ যথাসময়ে ইয়াকূবকে প্রদর্শন করেছেন। কেননা মু‘জেযা নবীগণের ইচ্ছাধীন নয়। এটা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি সময় ও প্রয়োজন মাফিক নবীগণের মাধ্যমে তা প্রদর্শন করে থাকেন। যদি এটা নবীগণের ইচ্ছাধীন হত, তাহলে বাড়ীর অদূরে জঙ্গলের এক পরিত্যক্ত কূয়ায় ইউসুফ তিনদিন পড়ে রইলেন, তার রক্তমাখা জামা পিতার কাছে দেওয়া হল তখন তো তিনি ইউসুফের খবর জানতে পারেননি। তাই নবীদের মু‘জেযা হৌক বা দ্বীনদার মুমিনদের কারামত হৌক, কোনটাই ব্যক্তির ইচ্ছাধীন নয়, বরং সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছাধীন।
ইউসুফ (আঃ) এর ভাইদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শনের তাৎপর্য
ইউসুফ ভাইদের উপরে কোনরূপ প্রতিশোধ নিতে চাননি। বরং তিনি চেয়েছিলেন তাদের তওবা ও অনুতাপ। সেটা তিনি যথাযথভাবেই পেয়েছিলেন। কেননা এই দশ ভাইও নবীপুত্র এবং তাদেরই একজন ‘লাভী’ (لاوى) -এর বংশের অধঃস্তন চতুর্থ পুরুষ হয়ে জন্ম নেন অন্যতম যুগশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মূসা (আঃ)।
বস্তুত ইয়াকূব (আঃ)-এর উক্ত বারোজন পুত্রের বংশধারা হিসাবে বনু ইস্রাঈলের বারোটি গোত্র সৃষ্টি হয় এবং তাদের থেকেই যুগে যুগে জন্ম গ্রহণ করেন লক্ষাধিক নবী ও রাসূল। যাঁদের মধ্যে ছিলেন দাঊদ ও সুলায়মানের মত শক্তিধর রাষ্ট্রনায়ক, রাসূল ও নবী এবং বনু ইস্রাঈলের সর্বশেষ রাসূল হযরত ঈসা (আঃ)। অতএব বৈমাত্রেয় হিংসায় পদস্খলিত হলেও নবী রক্তের অন্যান্য গুণাবলী তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। ইউসুফ (আঃ) তাই তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে নিঃসন্দেহে বিরাট মহত্ত্ব ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে অর্থাৎ এই ঘটনার প্রায় আড়াই হাজার বছর পরে বনু ইসমাঈলের একমাত্র ও সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবী বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর জানী দুশমন মক্কার কাফেরদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তিনিও সেদিন ইউসুফের ন্যায় একই ভাষায় বলেছিলেন, لاتثريبَ عليكمُ اليوم فاذهبوا وأَنتمُ الطُّلَقاءُ ‘তোমাদের প্রতি আজ কোন অভিযোগ নেই। যাও! তোমরা মুক্ত’। শুধু তাই নয়, কাফের নেতা আবু সুফিয়ানের গৃহে যে ব্যক্তি আশ্রয় নিবে, তাকেও তিনি ক্ষমা ঘোষণা করে বলেন, مَنْ دَخَلَ دَارَ أَبى سُفيانَ فهو آمِنٌ ‘যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়ীতে আশ্রয় নিবে, সে নিরাপদ থাকবে’।[30] তাতে ফল হয়েছিল এই যে, যারা ছিল এতদিন তাঁর রক্ত পিয়াসী, তারাই হল এখন তাঁর দেহরক্ষী। মক্কা বিজয়ের মাত্র ১৯ দিন পরে হুনায়েন যুদ্ধে নওমুসলিম কুরায়েশদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং দু’বছর পরে আবুবকরের খেলাফতকালে ইয়ারমূকের যুদ্ধে আবু সুফিয়ানের ও তার পুত্র ইয়াযীদের এবং আবু জাহ্ল-পুত্র ইকরিমার কালজয়ী ভূমিকা ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তাই বিদ্বেষী সৎ ভাইদের ক্ষমা করে দিয়ে ইউসুফ (আঃ) নবীসুলভ মহানুভবতা এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
ঘটনাটির কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ:
اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَـذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيراً وَأْتُونِي بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِينَ- وَلَمَّا فَصَلَتِ الْعِيرُ قَالَ أَبُوهُمْ إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَ لَوْلاَ أَن تُفَنِّدُونِ- قَالُوا تَاللهِ إِنَّكَ لَفِي ضَلاَلِكَ الْقَدِيمِ- (يوسف ৯৩-৯৫)-
ইউসুফ তার ভাইদের বললেন, ‘তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও। এটি আমার পিতার চেহারার উপরে রেখো। এতে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসবে। আর তোমাদের পরিবারবর্গের সবাইকে আমার কাছে নিয়ে আস’। ‘অতঃপর কাফেলা যখন রওয়ানা হ’ল, তখন (কেন‘আনে) তাদের পিতা বললেন, যদি তোমরা আমাকে অপ্রকৃতিস্থ না ভাবো, তবে বলি যে, আমি নিশ্চিতভাবেই ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি’। ‘লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! আপনি তো আপনার সেই পুরানো ভ্রান্তিতেই পড়ে আছেন’ (ইউসুফ ১২/৯৩-৯৫)।
[30]. আর-রাহীকুল মাখতূম (কুয়েতঃ ১৪১৪/১৯৯৪), পৃঃ ৪০৫, ৪০১।
ইয়াকূব (আঃ) দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন
যথাসময়ে কাফেলা দীর্ঘ সফর শেষে বাড়ীতে পৌঁছল এবং বড়ভাই ইয়াহূদা ছুটে গিয়ে পিতাকে ইউসুফের সুসংবাদ দিলেন। অতঃপর ইউসুফের প্রদত্ত জামা পিতার মুখের উপরে রাখলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় সাথে সাথে তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল। খুশীতে উদ্বেলিত ও আনন্দে উৎফুল্ল বৃদ্ধ পিতা বলে উঠলেন, ‘আমি কি বলিনি যে, আল্লাহর নিকট থেকে আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না’। অর্থাৎ ইউসুফ জীবিত আছে এবং তার সাথে আমার সাক্ষাত হবে, এ খবর আল্লাহ আমাকে আগেই দিয়েছিলেন। বিষয়টির কুরআনী বর্ণনা নিম্নরূপ:
فَلَمَّا أَنْ جَاءَ الْبَشِيْرُ أَلْقَاهُ عَلَى وَجْهِهِ فَارْتَدَّ بَصِيْراً قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّيْ أَعْلَمُ مِنَ اللهِ مَا لاَ تَعْلَمُوْنَ-(يوسف ৯৬)-
‘অতঃপর যখন সুসংবাদ দাতা (ইয়াহূদা) পৌঁছল, সে জামাটি তার (ইয়াকূবের) চেহারার উপরে রাখল। অমনি সে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল এবং বলল, আমি কি তোমাদের বলিনি যে, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা জানি, তোমরা তা জানো না’? (ইউসুফ ১২/৯৬)।
ইউসুফ (আঃ) এর সুন্দরতম জীবন কাহিনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
১ম পর্ব ২য় পর্ব ৩য় পর্ব ৪র্থ পর্ব ৫ম পর্ব ৬ষ্ট পর্ব ৭ম পর্ব ৮ম পর্ব ৯ম পর্ব ১০ম পর্ব ১১-তম পর্ব ১২-তম পর্ব
************************************
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url