জীবন ঘনিষ্ট ইসলামিক প্রশ্নোত্তর (পর্ব -০৮) || ইদ্দত শুরু তালাকের পর || গর্ভবতী নারীর ইদ্দত || ইদ্দত অবস্থায় বিবাহের প্রস্তাব ||
পড়ুয়া ছাত্রীর স্বামী মারা গেলে
কোন পড়ুয়া ছাত্রীর স্বামী মারা গেলে সে কীভাবে ইদ্দত পালন করবে? তার কি বিদ্যালয়ে যাওয়া বৈধ হবে?
অন্যান্য মহিলাদের মতো তার জন্যও স্বগৃহে ইদ্দত পালন করা তাতে সকল প্রকার সৌন্দর্য ও সুগন্ধি বর্জন করা জরুরী। অবশ্য নিজের একান্ত প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারে। সুতরাং দিনের বেলায় সে বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস করে আসতে পারে। ৬০০ (লাজনাহ দায়েমাহ)
অবশ্য ইদ্দতের ভিতরে হজ্জ সফরে যেতে পারে না।
স্ত্রীকে তালাক দিয়ে স্বামী হঠাৎ মারা গেলে
স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর স্বামী হটাৎ মারা যায়। ঐ স্ত্রীকে কি ইদ্দত পালন করতে হবে? ঐ স্ত্রী কি তার ওয়ারেস হবে?
যে তালাকে স্ত্রী প্রত্যনয়ণযোগ্য থাকে সেই (রজয়ী) তালাক পাওয়া অবস্থায় স্ত্রীকে শোকপালনের ইদ্দত পালন করতে হবে এবং স্বামীর ওয়ারেসও হবে। কারণ পূর্বের মতোই। পক্ষান্তরে বায়েন বা খোলা তালাক পাওয়ার ইদ্দতে অথবা ফাসখের ইদ্দতে থাকলে স্ত্রীকে শোকপালনের ইদ্দত পালন করতে হবে না এবং সে স্বামীর ওয়ারেসও হবে না। ৬০১ (ইবনে উষাইমীন)
স্বামী-স্ত্রীর মিলন হওয়ার আগেই স্বামী মারা গেলে
বিবাহের পর স্বামীর সাথে বাসর বা মিলন হওয়ার আগেই যদি স্বামী মারা যায়, তাহলে কি ইদ্দত পালন করতে হবে? ঐ স্ত্রী কি তার ওয়ারেস হবে?
হ্যাঁ, ঐ স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীগন চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে।” (বাকারাহঃ ২৩৪)
এখানে মহান আল্লাহ আমভাবে সকল স্ত্রীর প্রতিই একই নির্দেশ দিয়েছেন। আর আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যে স্ত্রীলোক আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে স্বামী ছাড়া অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নয়। তার স্বামীর জন্য সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।” ৬০২ (বুখারী ও মুসলিম)
এখানে মহানবী (সঃ) আমভাবে সকল স্ত্রীর প্রতিই একই নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ মীরাসের আয়াতেও আম নির্দেশ আছে। সুতরাং সে স্বামীর (এক চতুর্থাংশ সম্পত্তির) ওয়ারেশ হবে; যদি অন্য কোন বাধা না থাকে। ৬০৩ (ইবনে বায)
গর্ভস্থ ভ্রুন যদি গর্ভচ্যুত হয়, তাহলে কি গর্ভবতীর ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যাবে?
ভ্রুন ভূমিষ্ঠ হলেই গর্ভবতীর ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। (সাদী) যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “ গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।” (ত্বালাক্বঃ ৪)
ইদ্দত শুরু তালাকের পর
ইদ্দত যদি মহিলার গর্ভে সন্তান আছে কি না, তা দেখার জন্য হয়, তাহলে স্বামী ছেড়ে এক দেড় বছর মায়ের বাড়িতে থাকার পর যে মহিলাকে স্বামী তালাক দেয়, তাঁকেও কি অতিরিক্ত তিন মাসিক অথবা মাসিক না হলে তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে?
আসলে ইদ্দত শুরু হবে তালাকের পর থেকে। ইতিপূর্বে সে স্বামীর সাথে বহু দিন যাবৎ মিলন না করে থাকলেও বিধান এটাই যে, তালাক হওয়ার পর নির্ধারিত ইদ্দত পালন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“”তালাকপ্রাপ্তা (বর্জিতা) নারীগণ তিন রজঃস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকবে। (অর্থাৎ বিবাহ করা থেকে বিরত থাকবে) (বাকারাহঃ ২২৮)
গর্ভবতী নারীর ইদ্দত
স্বামী মারা গেলে এবং গর্ভে দুই মাস এর বাচ্চা থাকলে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করবে, নাকি প্রসব হওয়া পর্যন্ত আরো প্রায় ৭ মাস ইদ্দত পালন করবে?
গর্ভবতীর ইদ্দত শেষ হবে প্রসবের পর; যদিও তা তুলনামূলক লম্বা। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “ গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।” (ত্বালাক্বঃ ৪)
একই কারণে গর্ভের শেষের দিকে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ইদ্দত মাত্র কয়েক ঘণ্টা হতে পারে।
ইদ্দত অবস্থায় বিবাহের প্রস্তাব
যে মহিলা স্বামী মরার ইদ্দত আছে, সে মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া যায় কি না?
ইদ্দতে থাকা বিধবাকে সরাসরি বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া বৈধ নয়। অবশ্য আভাসে ইঙ্গিতে বিয়ের কথা জানানোতে দোষ নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ আর তোমরা যদি আভাসে ইঙ্গিতে উক্ত রমণীদেরকে বিবাহের প্রস্তাব দাও অথবা অন্তরে তা গোপন রাখ, তাতে তোমাদের দোষ হবে না। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথা বার্তা গোপনে তাদের নিকট কোন অঙ্গীকার করো না; নির্দিষ্ট সময়ে (ইদ্দত)পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করো না। আর জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের মনোভাব জানেন। অতএব তাকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, বড় সহিষ্ণু।” (বাকারাহঃ ২৩৫)
ইদ্দতের সময়কাল পিছিয়ে দেওয়া
ইদ্দত পালনের সময়কাল কি পিছিয়ে দেওয়া যায়?
মোটেই না। মৃত্যুর পর থেকেই সে সময় শুরু হয়ে যায়। ৬০৪ (ইবনে উষাইমীন)
ইদ্দত পালনকালে ঘড়ি পরা
ইদ্দত পালন করার সময় কি ঘড়ি পরা যায়?
কেবল সময় দেখার উদ্দেশ্যে পরা যায়। জরুরী না হলে না পরাই উত্তম। যেহেতু তা অলঙ্কারের মতো। ৬০৫ (লাজনাহ দায়েমাহ)
ইদ্দতের সময় সাদা কাপড় পরা
ইদ্দত পালনের সময়ে কি বিধবাকে সাদা কাপড়ই পড়তে হবে?
ইদ্দত পালনের জন্য কোন নির্দিষ্ট রঙের লেবাস নেই। যে লেবাসে সৌন্দর্য আছে, তা বর্জন করে সাদাসিধা লেবাস পড়তে হবে। যে সাদা রঙের কাপড়ে সৌন্দর্য আছে, তাও পরা যাবে না।
****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url