জীবন ঘনিষ্ট ইসলামিক প্রশ্নোত্তর (পর্ব -০৭) || স্ত্রীকে থালাকের হুমকি || স্ত্রীর মাসিক অবস্থায় তালাক || ইদ্দত ||






স্ত্রীকে তালাকের হুমকি

আমি স্ত্রীকে বলেছিলাম, ‘তুমি তোমার দোলাভাইয়ের বাড়ী গেলে তোমাকে তালাক।’ অতঃপর সে আমার কথা মানেনি, সে তার দুলাভাইয়ের বাড়ী গেছে। এখন কি তালাক হয়ে যাবে? এখন আমার করণীয় কি?

অবাধ্য বউকে বাধ্য করার জন্য তালাকের হুমকি দেওয়া যায়, কিন্তু তাকে জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার সংকল্প না থাকলে তালাক দিয়ে ফেলতে হয় না। তবুও নিয়ত যদি জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার এবং তালাক দেওয়ার থাকে, তাহলে তালাক হয়ে যাবে। ইদ্দতের মধ্যে তাকে যথা নিয়মে ফিরিয়ে নিতে হবে। পক্ষান্তরে তাকে কেবল সক্তভাবে বাধা দেওয়ার নিয়ত থাকলে এবং তালাকের নিয়ত আদৌ না থাকলে তালাক হবে না। বরং তার মান হবে কসমের। সে ক্ষেত্রে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।

তালাকের হুমকি দিয়ে কিছু করতে বলা

আমি মায়ের বাড়িতে ছিলাম। স্বামী বলেছিল, ‘আজ তুমি বাড়ী না ফিরলে, তোমাকে তালাক।’ আমি বাড়ী ফিরতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার ভাই জেদ ধরে আমাকে ফিরতে দিল না। এখন আমার কি তালাক হয়ে গেছে?

যদি আপনার ভাইয়ের আপনাকে জোরপূর্বক আটকে রাখার কথা সত্য হয়, তাহলে তালাক হবে না। ৫৯১ (মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম) পড়ন্ত স্বামীর মনে তালাকের নিয়ত না থাকলে এবং কেবল তাকীদ উদ্দেশ্য হলে তাকে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।

ছয় মাস স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক না রাখা

স্বামী ছয় মাস স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক না রাখলে আপনা আপনি তালাক হয়ে যায় কি?

শরীয়তে আপনা আপনি তালাক বলে কোন কথা নেই। তালাক দিতে হয়, না হয় নিতে হয়। উভয় পক্ষ সম্মত থাকলে ছয় মাস কেন, ছয় বছরও দূরে থাকতে পারে। অবশ্য স্বামী নিখোঁজ হয়ে গেলে, সে কথা ভিন্ন। নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে পূর্ণ চার বছর অপেক্ষা করার পর আর চার মাস দশদিন স্বামী মৃত্যুতে ইদ্দত পালন করে স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারে। ‘লিআন’ হওয়ার পর স্বামী স্ত্রীর মাঝে আপনা আপনি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তদনুরূপ বিবাহ অবৈধ প্রমাণিত হলে, স্বামী স্ত্রীর একজন মুরতাদ হয়ে গেলে সাথে সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করলে প্রথম স্ত্রীর তালাক চাওয়া

স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করেছে বলে কি প্রথম স্ত্রীর তালাক চাওয়া বৈধ; যদিও বৈধভাবে শরীয়তসম্মত বিবাহ হয়।

শরীয়তের শর্ত মেনে দুজনকেই সুখী রাখতে পারলে প্রথমার তালাক চাওয়া বৈধ নয়। যেমন দ্বিতীয়ার জন্যও বৈধ নয় প্রথমাকে তালাক দিতে স্বামীকে চাপ দেওয়া।

মহানবী (সঃ) বলেন, “যে স্ত্রীলোক অকারণে তার স্বামীর নিকট থেকে তালাক চাইবে, সে স্ত্রীলোকের জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যাবে।” ৫৯২ (আবূ দাঊদ ২২২৬, তিরমিযী ১১৮৭, ইবনে মাজাহ ২০৫৫ নং, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী ৭/৩১৬, সহীহুল জামে ২৭০৬ নং)

নবী (সঃ) বলেন, “কোন মহিলা তার বোনের (সতীনের) তালাক চাইবে না; যাতে সে তার পাত্রে যা আছে, তা ঢেলে ফেলে দেয়। (এবং একাই স্বামী প্রেমের অধিকারীনী হয়)” ৫৯৩ (আবূ দাঊদ ২২২৬, তিরমিযী ১১৮৭, ইবনে মাজাহ ২০৫৫ নং, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী ৭/৩১৬, সাহীহুল জামে ২৭০

স্ত্রীর মাসিক অবস্থায় তালাক

স্ত্রীর মাসিক অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম। কিন্তু কোন সময় মাসিক থাকলেও তালাক দেওয়া যায়?

তিন সময় মাসিক থাকলেও তালাক দেওয়া যায়।
(১) তার সাথে মিলন না হয়ে থাকলে।
(২) গর্ভাবস্থায় মাসিক অব্যাহত থাকলে।
(৩) খোলা তালাক হলে। ৫৯৪ (বুখারি, মুসলিম)

স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় ফিরে পেতে চাইলে

স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় ফিরে পেতে চাইলে করণীয় কি?

একই সঙ্গে তিন বা ততোধিক বার অথবা একবার তালাক দিলে তা এক তালাক রজয়ী হয়। তাকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। ইদ্দত পার হয়ে গেলে স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। তারপরেও তাকে পেতে চাইলে নতুনভাবে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু নিয়মিত তিন তালাক দেওয়ার পর সে সুযোগ আর থাকে না। অবশ্য সে মহিলার অন্যত্র বিবাহ হলে, অতঃপর স্বামী তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দিলে অথবা মারা গেলে ইদ্দতের পর আগের স্বামী তাকে পূর্ণবিবাহ করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “ অতঃপর উক্ত স্ত্রীকে যদি সে (তৃতীয়) তালাক দেয়, তবে সে পর্যন্ত না ঐ স্ত্রী অন্য স্বামীকে বিবাহ করবে, তার পক্ষে সে বৈধ হবে না। অতঃপর ঐ দ্বিতীয় স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় এবং যদি উভয় মনে করে যে, তারা আল্লাহ্‌র সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে, তাহলে তাদের (পুনর্বিবাহের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে) ফিরে আসায় কোন দোষ নেই। এ সব আল্লহর নির্ধারিত সীমারেখা, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ ঐগুলি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।” (বাকারাহঃ ২৩০)

জ্ঞাতব্য যে, এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে ‘হালালা-বিবাহ’ দিয়ে স্ত্রী হালাল করা বৈধ নয়। যেহেতু তাতে স্ত্রী হালাল হয় না।

সতর্কতার বিষয় যে, তালাকের বিষয় যে, তালাকের বিষয়টি সকল ক্ষেত্রে এক রকম নয়। সুতরাং সে ক্ষেত্রে স্থানীয় কাযীর সহযোগিতা প্রয়োজন।

রজয়ী তালাকের পর স্ত্রী ফিরতে না চাইলে

রজয়ী তালাক দিয়ে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় স্ত্রী যদি ফিরতে না চায়, তাহলেও কি সে স্ত্রী থাকবে?

রজয়ী তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে দু’জনকে সাক্ষী রেখে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে সে স্ত্রীই থাকবে, যদিও সে ফিরতে রাজী না হয়। ৫৯৬ (লাজনাহ দায়েমাহ) তালাকের পর এমন স্বামীর সাথে স্ত্রী সংসার করতে না চাইলে খোলা তালাক নিতে পারে।

স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ

স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তাদের সন্তান কার নিকট থাকবে?

মহানবী (সঃ) বলেছেন, “পূর্ণবিবাহ না হওয়া পর্যন্ত মহিলা তার সন্তানের বেশী হকদার।” ৫৯৭ (দারাকুত্বনী ৪১৮ নং, সিসঃ ৩৬৮ নং) অবশ্য মায়ের মধ্যে কোন প্রতিকূল গুণ থাকলে আলাদা কথা। সেক্ষেত্রে বাপই সন্তানের অধিকার পাবে। যেমন মায়ের হাতে সন্তান থাকলে খারাপ হয়ে যাবে--- এই আশঙ্কা থাকলে সে সন্তানের অধিকার হারাবে। পড়ন্ত সন্তান যদি জ্ঞান সম্পন্ন হয়, তাহলে তাকে এখতিয়ার দেওয়া হবে। সে যাকে বেছে নেবে, সেই তার প্রতিপালনের দায়িত্ব পাবে। ৫৯৮ (তিরমিযী ১৩৫৭, ইবনে মাজাহ ২৩৫১ নং)

তালাক ও শোক পালনের ইদ্দত

তালাক ও শোক পালনের ইদ্দত কখন থেকে শুরু হবে? খবর জানার পর থেকে, নাকি তালাক ও মরনের দিন থেকে?
তালাক ও শোক পালনের ইদ্দত খবর জানার পর থেকে নয়, বরং তালাক ও মরনের দিন থেকে গণ্য হবে। সুতরাং যদি কোন মহিলা তিন মাসিকের পর খবর পায় যে, তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে, তাহলে নতুন করে সে আর ইদ্দত পালন করবে না। অনুরূপ যদি কোন মহিলা ৪ মাস ১০ দিন পর জানতে পারে যে, তার স্বামী মারা গেছে, তাহলে তাকে আর ইদ্দত পালন করতে হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, তালাকের ইদ্দত অন্য মহিলাদের জন্য ভিন্ন রকম।

“তোমাদের যেসব স্ত্রীদের মাসিক হবার আশা নেই, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যাঁদের এখনো মাসিক হয়নি তাঁদেরও। আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।” (ত্বালাক্বঃ ৪)
যেমন শোকপালনের ইদ্দতও গর্ভকাল পর্যন্ত।

স্বামী মারা গেলে মহিলার ইদ্দত

স্বামী মারা গেলে মহিলা কোথায় ইদ্দত পালন করবে?

যে গৃহ থেকে স্বামী মরার খবর পাবে, সেই গৃহ তার জন্য নিরাপদ ও সুবিধাজনক হলে সেখানে ৪ মাস ১০ দিন অথবা গর্ভকাল ইদ্দত পালন করবে। মহানবী (সঃ) ফুরাইআহকে বলেছিলেন,

“তুমি সেই গৃহে অবস্থান কর, যে গৃহে তোমার কাছে তোমার স্বামীর মৃত্যু সংবাদ এসেছে।” ৫৯৯ (আহমাদ ৬/৩৭০, ইবনে মাজাহ ২০৩১, হাকেম ২/২২৬, ত্বাবারানীর কাবীর ১০৮৪ নং, বাইহাক্বী ৭/ ৪৩৪)

সুতরাং সে যদি সেই সময় স্ত্রীর মায়ের বাড়িতে থাকে এবং শ্বশুরবাড়ি অপেক্ষা সেই বাড়ি সুবিধাজনক ও নিরাপদ হয়, তাহলে সেখানেই ইদ্দত পালন করতে হবে। মেয়েরা বাড়িতে থাকলেও তাই। নচেৎ স্বামী গৃহে ফিরে যেতে হবে।

পক্ষান্তরে স্বামী গৃহে থাকা অবস্থায় স্বামী মারা গেলে এবং সেখানে তাকে দেখাশোনা করার মতো কোন মাহরাম পুরুষ বা তেমন কেউ না থাকলে, সেখানে বসবাস করা তার অসুবিধাজনক বা ক্ষতিকর হলে মায়ের বাড়িতে গিয়ে ইদ্দত পালন করতে পারে।



****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url