নামায সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর - ২
জামাতে নামায আদায় সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর
পাতলা শাড়ি বা ওড়না পড়ে নামায
পাতলা শাড়ি বা ওড়না পড়ে মেয়েদের নামায কি শুদ্ধ হবে?
যে লেবাস পরার পরেও ভিতরের চামড়া ও চুল নজরে আসে, সে লেবাস পরে নামায শুদ্ধ হবে না। ১৫৮
১৫৮ (ইবনে উষাইমীন)
কাঁচা পিঁয়াজ খেয়ে নামায
কাঁচা পিঁয়াজ রসুন খেয়ে কি নামায শুদ্ধ হয়?
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি (কাঁচা) রসুন বা পিঁয়াজ খায়, সে যেন আমাদের নিকট থেকে দূরে অবস্থান করে অথবা আমাদের মসজিদ থেকে দূরে থাকে।” ১৫৯
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, “যে ব্যক্তি (কাঁচা) পিঁয়াজ রসুন ও লীক পাতা খায়, সে যেন অবশ্যই আমাদের মসজিদের নিকটবর্তী না হয়। কেননা, ফিরিশতাগণ সেই জিনিসে কষ্ট পান, যাতে আদম সন্তান কষ্ট পায়।”
কাঁচা পিঁয়াজ রসুন লীক পাতা নামাযের আগে খাওয়া উচিৎ নয়। খেতে বাধ্য হলে এবং মুখ এর গন্ধ দূরীভূত না করতে পারলে জামাআতে শামিল হওয়া বৈধ নয়। তবে একাকী ও জামা আতে নামায পড়লে নামায শুদ্ধ হয়ে যায়। অনুরূপ বিড়ি সিগারেট খাওয়ার ফলে মুখ বা লেবাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।তা খাওয়া হারাম এবং তাঁর দুর্গন্ধ নিয়ে মসজিদে বা জামাআতে আসাও অবৈধ। একই ভাবে যাঁদের গায়ে কোন প্রকারের দুর্গন্ধ আছে, তাদের জন্য জামাআতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ। সকলের জন্য জরুরী, সকল প্রকার দুর্গন্ধমুক্ত হয়ে জামাআতে উপস্থিত হওয়া। ১৬০
১৫৯ (বুখারী ও মুসলিম), ১৬০ (ইবনে বায)
অন্য মহল্লার মসজিদে জুমআহ বা তারাবীহ আদায়
মহল্লা বা গ্রাম এর মসজিদ ছেড়ে অন্য মহল্লা বা গ্রাম এর মসজিদে জুমআহ বা তারাবীহ ইত্যাদি নামায পড়তে যাওয়া বৈধ কি?
তাতে উদ্দেশ্য থাকে ভাল খতীবের ভাল বক্তব্য শোনা এবং সুমধুর কণ্ঠবিশিষ্ট ক্বারি ইমামের কুরআন শুনে উপকৃত হওয়া। সাইকেল বা গাড়িযোগে গেলে কি তা হাদিসে বর্ণিত নিষেধের আওতায় পড়ে, যাতে বলা হয়েছে, “তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও সফর করা যাবে না; মদিনা শরীফের মসজিদে নববী, মাসজিদুল হারাম (কা’বা শরীফ) ও মসজিদে আকসা (প্যালেষ্টাইনের জেরুজালেমের মসজিদ)।” ১৬১ (বুখারী ১৯৯৫, মুসলিম ১৩৯৭ নং)
না। উক্ত সফর নিষিদ্ধ সফরের পর্যায়ভুক্ত নয়। কারণ মসজিদের বরকতলাভের উদ্দেশ্যে সে সফর করা হয় না।বরং উক্ত সফর ইলম তলবের সফর হিসেবে পরিগণিত। আর ইলমে তলবের জন্য সফর নিষিদ্ধ নয়। সলফে সালেহীন ইলম তলবের জন্য দূর দূরান্তের পথ সফর করেছেন। আর মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথ অবলম্বন করে চলে, যাতে সে ইলম (শরয়ী জ্ঞান) অন্বেষণ করে, আল্লাহ তাঁর বিনিময়ে তাঁর জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে দেন।” ১৬২
১৬২ (মুসলিম ২৬৯৯ নং, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, হাকেম।)
তারাবীহর নামাযের দোয়া
তারাবীহর নামাযের মাঝে মধ্যে পঠনীয় কোন নির্দিষ্ট দুআ বা দরূদ আছে কি?
তারাবীহর নামাযের দুই বা চার রাকাআত পড়ে অথবা সবশেষে পঠনীয় নির্দিষ্ট কোন দুআ দরূদ নেই। এ স্থলে নির্দিষ্ট কোন দুআ বা দরূদ সশব্দে বা নিঃশব্দে, একাকী বা সমবেত সুরে পড়লে বিদআত বলে পরিগণিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে (নিজের পক্ষ থেকে) কোন নতুন কথা উদ্ভাবন করল-- যা তাঁর মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।” ১৬৩
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল, যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই তা বর্জনীয়।”
১৬৩ (বুখারী ও মুসলিম)
আযানের পূর্বে মাইকে কুরআন, দুআ বা গজল পড়া
ফজরের আযানের পূর্বে মাইকে কুরআন, দুআ (বা গজল) পড়া, অনুরূপ জুমআর খুতবার পূর্বে ক্বারীর কুরআন পড়া (বা কারো বক্তৃতা করা) কি শরীয়তসম্মত?
না। এমন কাজ শরীয়তসম্মত নয়। কুরআন পড়া ভাল কাজ হলেও উক্ত সময়ে পড়া বিদআত হবে। কারণ, তাঁর কোন দলীল নেই। কাজ ভাল বলেই তা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সময়, পরিমাণ বা পদ্ধতির বাইরে তা করলে বিদআত হয়। পক্ষান্তরে কাজ খারাপ হলে তো তাকে ‘হারাম’ বলা হয়। পড়ন্ত বিদআতের ‘ভাল-মন্দ’ (হাসানাহ-সাইয়িআহ) বলে কোন প্রকার নেই। যেহেতু ‘কুল্লু বিদআতিন য্বালালাহ’। অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। ১৬৪
১৬৪ (লাজনাহ দায়েমাহ)
জামাআতে ইমাম রুকূ অবস্থায় থাকলে
জামাআত চলাকালে ইমাম রুকূ অবস্থায় থাকলে অনেক নামাযী বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে রুকুতে দেরি করতে বলে। যাতে সে রুকু বা রাকআত পেয়ে যায়। কেউ দৌড়ে আসে, কেউ সজোরে পদক্ষেপ করে, কেউ গলা-সাড়া দেয়, কেউ ‘ইন্নাল্লাহা মা’আস স্বাবেরীন’ বলে। শরীয়তের দৃস্টিতে এমন কাজ বৈধ কি?
তাদের এমন কাজ বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সঃ) বলেন, “নামাযের ইকামত হয়ে গেলে তোমরা দৌড়ে এসো না। বরং তোমরা স্বাভাবিকভাবে চলে এসো। আর তোমাদের মাঝে যেন স্থিরতা থাকে। অতঃপর যেটুকু নামায পাও, তা পড়ে নাও এবং যা ছুটে যায়, তা পুরা করে নাও।” ১৬৫
আভাষে-ইঙ্গিতে ইমামকে অপেক্ষা করতে বলায় রয়েছে বেআদবি। তাতে সকল নামাযীর ডিস্টার্ব হয় এবং তাদের মনোযোগ ও বিনয় বিনষ্ট হয়ে যায়। ১৬৬
১৬৫ (বুখারী ৬৩৫, মুসলিম ৬০২ নং), ১৬৬ (ইবনে জিবরীন)
ইমামের জন্য রুকু লম্বা করা
রুকু অবস্থায় কারো আসা বুঝতে পারলে ইমামের জন্য রুকু লম্বা করা কি বিধেয়?
এতটুকু সময় অপেক্ষা করা বৈধ, যাতে নামাযরত নামাযীদের মনে বিরক্তি না আসে। কারণ বাইরে থেকে আগন্তক ব্যক্তি অপেক্ষা তাদের অবস্থার খেয়াল রাখা অধিক জরুরী। বিশেষ করে শেষ রাকাআতে রুকু পাইয়ে দেওয়ায় লাভ এই হয় যে, তাঁর নামায ও জামাআত পাওয়া হয়ে যায়। নবী (সঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকাআত পেল, সে নামায পেয়ে গেল।” ১৬৭
অনুরূপ শেষ তাশাহহুদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কিঞ্চিৎ দেরি করায় দোষ নেই। ১৬৮
১৬৭ (বুখারী ৫৮০, মুসলিম ৬০৭ নং), ১৬৮ (ইবনে বায)
রুকু পেলে রাকআত গণ্য হয়
সূরা ফাতিহা না পড়লে যদি নামায না হয়, তাহলে রুকু পেলে রাকআত গণ্য হয় কীভাবে?
প্রত্যেক বিষয়ের ব্যাতিক্রম অবস্থা থাকে। রুকু পেলে রাকাআত গণ্য হওয়ার ব্যাপারটাও সেই রকম। কিয়াম নামাযের রুকন। কিন্তু অসুবিধার ক্ষেত্রে কিয়াম ছাড়া নামায হয়ে যায়। আবূ বাকরাহ (রাঃ) একদা মসজিদে প্রবেশ করতেই দেখলেন, নবী (ﷺ) রুকুতে চলে গেছেন। তিনি তাড়াহুড়ো করে কাতারে শামিল হওয়ার আগেই রুকু করলেন। অতঃপর রুকুর অবস্থায় চলতে চলতে কাতারে গিয়ে শামিল হলেন। এ কথা নবী (সঃ) কে বলা হলে তিনি তাঁর উদ্দেশ্যে বললেন, “আল্লাহ তোমার আগ্রহ আর বৃদ্ধি করুক। আর তুমি দ্বিতীয় বার এমনটি করো না। (অথবা আর তুমি ছুটে এসো না। অথবা তুমি নামায ফিরিয়ে পড়ো না।)” ১৬৯
১৬৯ (বুখারী, আবূ দাঊদ, মিশকাত ১১১০ নং )
নামায ছুটে গেলে কাযা পড়বে কখন
নামায ছুটে গেলে কাযা পড়ব কখন? আগামী ওয়াক্ত বা আগামী দিনের ঐ নামাযের সময় পর্যন্ত কি পিছিয়ে দেওয়া চলে?
আগামীতে যখনই সময় পাওয়া যাবে, তখনই তা পড়ে নিতে হবে। নিষিদ্ধ সময়েও তা পড়া যাবে। আগামী ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না। মহানবী (সঃ) বলেন, “নিদ্রা অবস্থায় কোন শৈথিল্য নেই। শৈথিল্য তো জাগ্রত অবস্থায় হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তাঁর উচিৎ, স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া।” কেননা, আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর আমাকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে তুমি নামায কায়েম কর।” ১৭০
১৭০ (ত্বহাঃ ১৪, মুসলিম, মিশকাত ৬০৪ নং)
নামায কাযা রেখে মারা গেলে
নামায কাযা রেখে মারা গেলে অনেক হিসাব করে ছেড়ে দেওয়া নামাযের ‘কাফফারা’ আদায় করে, তা কি বিধেয়?
রোগী ব্যক্তির জন্য নামায মাফ নয়। যতক্ষণ জ্ঞান থাকে, ততক্ষণ তাকে নামায পড়তে হবে। ছুটে গেলে কাযা পড়ে নিতে হবে। এটাই তাঁর কাফফারা। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “যখন কেউ কোন নামায পড়তে ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে পড়ে, তখন তাঁর কাফফারা হল স্মরণ হওয়া মাত্র তা পড়ে নেওয়া।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “(এই কাযা আদায় করা ছাড়া) এর জন্য আর অন্য কোন কাফফারা নেই।”
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামায ছেড়ে মারা গেছে, তাঁর তরফ থেকে চাল বা টাকার কাফফারা আদায় করলেও কোন কাজের নয়। কাজের নয় তাঁর নামে দান খয়রাত বা অন্য কোন ঈসালে সওয়াব করা।
****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url