মির্জা গোলাম আহম্মদ কাদিয়ানী || ভন্ড নবীর আবির্ভাবের ইতিহাস || ভন্ড নবী ||




কিয়ামতের পূর্বে ভণ্ড নবীর আবির্ভাব প্রসঙ্গে


বিভিন্ন হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত পরিস্কারভাবে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রাসূল, তাঁর আগমনের সাথে সাথে নুবুওয়াত ও রিসালাতের সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর পরে আর কোনো নবী বা রাসূল আসবেন না। তিনি একথাও স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, তাঁর পরে যদি কেউ নুবুওয়াতের দাবী করে তবে সে অবশ্যই একজন ঘোর মিথ্যাবাদী ভণ্ড।

মোহাম্মদ (সাঃ) ই শেষ নবী

বিভিন্ন হাদীসে তিনি তাঁর উম্মতকে ভণ্ড নবীদের আবির্ভাবের সংবাদ দান করে তাদের থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এক হাদীসে জাবির ইবনু সামুরাহ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
إِنَّ بَيْنَ يَدَيْ السَّاعَةِ كَذَّابِينَ فَاحْذَرُوهُمْ
‘‘নিশ্চয় কিয়ামতের পূর্বেই অনেক ঘোর মিথ্যাবাদীর (ভণ্ড নবীর) আবির্ভাব ঘঠবে। তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে।’’
অন্য হাদীসে আনাস ইবনু মালিক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
إِنَّ الرِّسَالَةَ وَالنُّبُوَّةَ قَدْ انْقَطَعَتْ فَلا رَسُولَ بَعْدِي وَلا نَبِيَّ
“রিসালাত বা রাসূলের পদ এবং নুবুওয়াত বা নবীর পদ শেষ হয়ে গিয়েছে, কাজেই আমার পরে কোনো রাসূল নেই এবং কোনো নবীও নেই।”

গবেষকগণ উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাধ্যমে নুবুওয়াতের সমাপ্তির বিষয়ে ৩৭ জন সাহাবী থেকে সহীহ সনদে ৬৫টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এভাবে আমরা দেখছি যে, কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশনার পাশাপাশি মুতাওয়াতির হাদীসের মাধ্যমে বিষয়টি সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। 

খাতমুন-নুবুওয়াত-এ অবিশ্বাসীরা মুরতাদ

বরং প্রকৃত বিষয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নবুয়ত ও খাতমুন-নুবুওয়াত একইভাবে বর্ণিত ও প্রমাণিত। যারা তাঁর নুবুওয়াতের বিষয় বর্ণনা করেছেন তাঁরাই তাঁর খাতমুন নুবুওয়াতের বিষয়ও বর্ণনা করেছেন। সাহাবীগণ সর্বসম্মতভাবে নবুওয়তের দাবিদার এবং তাদের অনুসারীদেরকে ধর্মত্যাগী মুরতাদ বলে গণ্য করেছেন। যদি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরে কেউ নিজেকে নবী বলে দাবি করে বা কেউ এরূপ দাবিদারের কথা সত্য বলে মনে করে তবে সে নিঃসন্দেহে ভণ্ড ও মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বা এরূপ ভণ্ডের অনুসারী। যদি কোনো মুসলিম নামধারী এরূপ দাবি করে বা এরূপ দাবিদারের কথা বিশ্বাস করে তবে সে ধর্মত্যাগী মুরতাদ বলে গণ্য হবে।

উপরন্তু যদি কেউ বিশ্বাস করে যে মুহাম্মাদ (সা.)-এর পরে কোনো নবী বা রাসূল এসেছেন, আসতে পারেন, আসার সম্ভাবনা আছে বা আসা অসম্ভব নয় তবে সে ব্যক্তিও অমুসলিম কাফির ও ধর্মত্যাগী মুরতাদ বলে গণ্য হবে, যদিও সে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে একজন নবী ও রাসূল বলে মানে, অথবা তাঁকে শ্রেষ্ঠ নবী বলে মানে, অথবা তাঁর শরীয়তের বিধান মেনে চলে। এই ব্যক্তি মূলত “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”-য় বিশ্বাস করে নি। কারণ কুরআনের মাধ্যমে এবং অগণিত মুতাওয়াতির হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত তাঁর দ্ব্যর্থহীন শিক্ষাকে অস্বীকার ও অমান্য করলে আর তাঁর নুবুওয়াতের স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ থাকে না।

ভন্ড নবীর আবির্ভাবের কারণ

এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলামের সোনালী দিনগুলিতে নুবুওয়াতের দাবি করে কেউ ইসলামের ক্ষতিসাধন করতে পারে নি। কারণ এ বিষয়ে মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রের সচেতনতা ছিল সুস্পষ্ট। কিন্তু গত কয়েক শতাব্দী যাবত অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। বিশেষত ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি সম্পর্কে মুসলিমদের অজ্ঞতা এবং সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শাসকগণের কূটকৌশলের কারণে এ সকল ভণ্ড মুসলিম সমাজের বিশেষ ক্ষতি সাধন করতে এবং অসংখ্য মুসলিমকে ধর্মচ্যুত করতে সক্ষম হয়েছে। এ সকল ভণ্ডের অন্যতম পাঞ্জাবের গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৪০-১৯০৮ খৃ)।

ভন্ড নবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী’র আবির্ভাব

১৮৪০ সালে সে পাঞ্জাবের কাদিয়ান নাম স্থানে জন্মগ্রহণ করে। ১৮৭৭ সালের দিকে সে দাবি করে যে, খৃস্টান ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে সে বিশাল একটি গ্রন্থ রচনা করবে। এ সময়ে খৃস্টান মিশনারী ও হিন্দু আর্য সমাজের মানুষের মুসলিমদের খুবই উত্যক্ত করছিল। গোলামের প্রচারণায় অনেকেই তার ভক্তে পরিণত হয়। এ সময়ে সে নিজেকে একজন আল্লাহর ওলী ও কাশফের অধিকারী বলে দাবি করে। এতে তার অনেক ভক্ত ও মুরিদ তৈরি হয়। ১৮৮৫ সালে (১৩০৩ হিজরীতে) সে নিজেকে শতাব্দীর মুজাদ্দিদ বলে দাবি করে। তার ভক্তদের অনেকেই সে দাবী মেনে নেয়। ১৮৯১ সালে সে দাবি করে যে, সে ইমাম মাহদী। এরপর সে দাবী করে যে, সে ঈসা মাসীহ। এরপর সে দাবি করে যে, তার কাছে ইলহাম আসে এবং তাকে মুহাম্মাদী দীনকে সংস্কার করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তখন সে বারবার বলত সে আহলূস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী এবং সে নবী নয়। সে যা কিছু বলে সবই ইলহামের মাধ্যমে সরাসরি রাসূলুল্লাহ সা. বা আল্লাহর নিকট থেকে জেনে বলে।

কাদিয়ানীর নবী হয়ে উঠার কাহিনী

(১) নিজেকে ইলহাম, ইলকা ও কাশফপ্রাপ্ত ওলী ও শতাব্দীর মুজাদ্দিদ বলে দাবি করা,
(২) বৃটিশ সরকারে পক্ষে কথা বলা এবং বৃটিশ বিরোধী সকল কর্মের জোরালো নিন্দা করা,
(৩) তার মতের বাইরে সমাজের সকল আলিম-উলামার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা,
(৪) নিজের অনুসারীদেরকে একমাত্র সঠিক মুসলিম বলে দাবি করা ও সাধারণ মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি পৃথক দল তৈরি করা,
(৫) বিভিন্নভাবে বহসের চ্যালেঞ্জ দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। এরপর ক্রমান্বয়ে সে নুবুওয়াত দাবি করে। ১৯০১ সালে সে দাবী করে যে, সে একজন নবী এবং সে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী।

গোলাম আহমদ কাদিয়ানী’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ

তার অনুসারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে ভারত বর্ষের অনেক আলেম তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন এবং মুসলমানদেরকে পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমস্ত ভন্ড এবং মিথ্যুক নবী থেকে উম্মাতকে সতর্ক করেছেন সে তাদেরই একজন। আল্লামা ছানাউল্লাহ অম্রিতসরী অত্যন্ত কঠোর ভাষায় তার প্রতিবাদ করেন। এতে মিথ্যুক কাদিয়ানী শায়খ ছানাউল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করলে উভয় পক্ষের মাঝে ১৩২৬ হিজরী সালে এক মুনাযারা (বিতর্ক) অনুষ্ঠিত হয়। তাতে এই মর্মে মুবাহালা হয় যে, দু’জনের মধ্যে যে মিথ্যুক সে যেন অল্প সময়ের মধ্যে এবং সত্যবাদীর জীবদ্দশাতেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হালাক হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা শায়খ ছানাউল্লাহর দু’আ কবূল করলেন। এই ঘটনার এক বছর এক মাস দশদিন পর ১৯০৮ সালে মিথ্যুক কাদীয়ানী ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে অভিশপ্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। 

ইদানিং পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভন্ড, প্রতারক, মিথ্যাবাদী, দাজ্জালের অগ্রদূত কাদিয়ানি গোষ্ঠি তাদের প্রচার বৃদ্ধি করেছে ! এ প্রেক্ষিতে মুসলমানদেরকে সতর্ক করা ঈমানী দায়িত্ব মনে করে এবং মহান আল্লাহ'র সন্তুষ্টির আশায় বিষয়টি পোষ্ট করলাম। 
মহান আল্লাহ শয়তানের ষড়যন্ত্র জাল থেকে মুসলিমগণকে হেফাযত করুন। আমিন।





****************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • নামহীন
    নামহীন ১০ মার্চ, ২০২৩ এ ৬:৪০ PM

    নুরাইয়্যাহদি ইয়াল্লাহু লিন্যুরিহি মাইয়্যাশাউ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি ইমামুল মুরছালিনা খাতামুন নাবীয়্যীন

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url