হাদিসে বর্ণিত ইচ্ছাকৃত নামাজ তরককারীর ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে তিনটি ঘটনা
হাদিসের গল্প
নামায সংক্রান্ত কয়েকটি ঘটনা !
ইচ্ছাকৃত নামাজ তরককারী ব্যভিচারী
ও হত্যাকারীর চেয়েও বড় পাপী
বর্ণিত আছে যে, বণী ইসরাঈলের এক মহিলা একবার হযরত মূসার (আঃ) কাছে এল। সে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসুল । আমি একটি ভীষণ পাপের কাজ করেছি। পরে তওবাও করেছি। আপনি দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করেন।”
মূসা (আঃ) বললেনঃ “তুমি কী গুনাহ করেছো?” সে বললোঃ “আমি ব্যভিচার করেছিলাম। অতঃপর একটি অবৈধ সন্তান প্রসব করি এবং তাকে হত্যা করে ফেলি।” মূসা (আঃ) বললেনঃ “হে মহাপাপী,
এক্ষুনি বেরিয়ে যাও।
আমার আশংকা, আকাশ থেকে এক্ষুনি আগুন নামবে এবং তাতে আমরা সবাই ভস্মীভূত হবো।” মহিলাটি ভগ্ন হৃদয়ে বেরিয়ে গেল।
অল্পক্ষণ পরেই জিবরীল (আঃ) এলেন। তিনি বললেনঃ “হে মূসা! আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছেন কী কারণে এই তওবাকারিণীকে তাড়িয়ে দিলেন? তার চেয়েও কি কোন অধম মানুষকে আপনি দেখেন নি?” মূসা বললেনঃ “হে জিবরীল! এর চেয়ে পাপিষ্ঠ কে আছে?”
জিবরীল (আঃ) বললেনঃ “ইচ্ছাকৃতভাবে নামায তরককারী।”
নামাজের প্রতি উদাসীনতার শাস্তি ভয়াবহ
অপর একটি ঘটনায় বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি তার বোনের দাফন কাফন সম্পন্ন করে বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখলো তার মানিব্যাগটি নেই। পরে তার মনে হলো, ওটা কবরের ভেতর পরে গেছে । তাই সে ফিরে গিয়ে কবর খুড়লো। দেখলো, কবর জুড়ে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সে পুণরায় মাটি চাপা দিয়ে কাদতে কাদতে বাড়ী গেল।
তার মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা জানালে তিনি বললেন, মেয়েটি নামাযের ব্যাপারে খামখেয়ালী করতো এবং সময় গড়িয়ে গেলে নামায পড়তো। বিনা ওজরে নামায কাযা করলে যদি এরূপ পরিণতি হতে পারে তাহলে বেনামাযীর পরিণাম কত ভয়াবহ হতে পারে। তা ভাবতেও গা শিউরে উঠে। শুধু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামায পড়াই যথেষ্ঠ নয়। নামাযকে শুষ্ঠুভাবে ও বিশুদ্ধভাবে পড়াও জরুরী। নচেত অশুদ্ধ নামায পড়া নামায না পড়ারই সমতুল্য।
তাড়াহুড়োর নামাজ নামাজই নয়
বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে যে, একদিন এক ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলো। রাসুল (সাঃ) তখন মসজিদেই বসে ছিলেন। লোকটি নামায পড়লো।
অতঃপর রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে সালাম করলো। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং নামায পড় ।কারণ তুমি নামায পড়নি।
সে চলে গেল এবং আগের মত আবার নামায পড়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে সালাম করলো । তিনি সালামের জবাব দিয়ে আবার বললেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং নামায পড়। কেননা তুমি নামায পড়নি।
এরূপ তিনবার নামায পড়ার পর লোকটি বললোঃ হে আল্লাহর রাসুল । আমি এর চেয়ে ভালো ভাবে নামায পড়তে পারি না। আমাকে শিখিয়ে দিন।
তিনি বললেনঃ “প্রথমে নামাযে দাঁড়িয়ে তাকবীর বল। অতঃপর যতটুকু পার কুরআন পাঠ কর। অতঃপর রুকু কর এবং রুকুতে গিয়ে স্থির হও। অতঃপর উঠে সোজা হয়ে দাড়াও। তারপর সিজদা দাও এবং সিজদায় গিয়ে স্থির হও। তারপর স্থির হয়ে বস। অতঃপর আবার সিজদা দাও এবং সিজদায় স্থির হও। এভাবে নামায শেষ কর।
হাদিসের শিক্ষা:
ঈমানের পরেই নামায সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। সময়ানুবর্তীতার সাথে ও বিশুদ্ধভাবে নামায না পড়লে আখেরাতে নাজাত লাভের আশা করা যায় না।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url